সোনার বিকল্প বিনিয়োগ – গোল্ড ইটিএফ

সোনার বিকল্প বিনিয়োগ – গোল্ড ইটিএফ

পুরাকাল থেকে আপামর ভারতবাসীর সোনার ওপর প্রবল আকর্ষণ। আকর্ষণের পরিমাণ এতটাই সন্তান অথবা স্নেহের কাউকে আজও ‘সোনা’ বলে ডাকা হয় ঘরে ঘরে। 

গহনার উপাদান বা ধাতু হিসেবে হীরে, প্ল্যাটিনাম যদিও অনেক বেশি দামি তবুও সোনার প্রতি আগ্রহে আজও এতটুকু খাদ পড়েনি। 

বহুমূল্যবান সোনাকে অন্নপ্রাশন, পৈতে, বিয়ে সব অনুষ্ঠানে অপরিহার্য বলে ধরা হয় অথচ সোনা কিনে বাড়িতে রাখা যথেষ্ট সমস্যা আজকের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে। চুরির ভয় থেকে যায়, তাই সোনা রাখার জন্য ব্যাঙ্কের লকারের শরণাপন্ন হতে হয়।  অর্থাৎ প্রচুর দাম দিয়ে সোনা কেনবার পরেও তার পেছনে আরো আর্থিক খরচের প্রয়োজন। সোনাকে স্ত্রীধন হিসেবে ধরা হয়। যেকোনো বিপদের সময়, যেমন আর্থিক অনিশ্চয়তায়, দুর্দিনে সোনা সাহায্য করে নিশ্চই, কিন্তু সমস্যাও আছে বিস্তর। যে ওজনের সোনা কেনা হয়, বিক্রয়ের সময় সেই ওজনের মুল্য কখনোই পাওয়া যায় না। বাংলা প্রবাদ অনুযায়ী সোনা কেনার সময় প্রচুর টাকা খরচ করতে হয় অথচ বিক্রি বা বন্ধক-এ সম্পূর্ণ বোকামি বলে প্রতিফলিত হয়। 

‘গোল্ড এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড’ (গোল্ড ইটিএফ) একদিক থেকে মুশকিল আসান।  এই সোনা হয়তো গয়না গড়িয়ে গায়ে পড়া যায় না, কিন্তু সম্পদ এখানেই মূল্য খুঁজে পায়। কারণ এই গোল্ড ইটিএফ-এ নির্দিষ্ট অর্থ দিয়ে কেনা সোনা শুধু সুরক্ষিতই থাকে না, আর্থিক ভাবে আর কোনো চাপও নিতে হয় না, কেউ চাইলে ‘ইটিএফ’ বিক্রি করে সোনার গয়নাও কিনতে পারেন। বাড়ির আলমারিতে না রেখে নিজের ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট এ রাখা যায় সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত হয়ে এবং গোল্ড ইটিএফ ‘সেবি’ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।  

বিষয়টি একটু পরিষ্কার করে দেখা যাক – 

• গয়নার জন্য সোনা কেনবার পর গয়না নির্মাণ খরচ হিসেবে ১৫-২০% অতিরিক্ত খরচ হয়। 

• কোনো বিপদে গয়না বিক্রি করতে গেলে ১০-২০% মূল্য কমে যায় খাদ হিসেবে। 

• গয়না ব্যাঙ্কের লকারে রাখতে গেলে তার জন্য নির্দিষ্ট অর্থ মূল্য দিতে হয়। 

• নিরাপত্তার জন্য সম্পত্তি সুরক্ষা বীমা করানো প্রয়োজন, কিন্তু তা খরচসাপেক্ষ। 

• সোনা কিনে রাখলে হয়ত ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হয় কিন্তু তিন বছর অপেক্ষা না করে বিক্রি করলে লাভের ওপর সাধারণ হারে কর দিতে হয়, তিন বছরের পর বিক্রি করলে দীর্ঘমেয়াদী মূলধনী কর দিতে হয়। ক্ষেত্র বিশেষে সম্পত্তি কর ধার্য হয়। 

• ব্যাঙ্ক থেকে ‘সোনার বার’ কিনলেও ১০-২০%  ব্যাঙ্ক চার্জ কাটা যায় এবং কোনো অবস্থায় ব্যাঙ্ক সেটা আর ফেরত দেয় না।  এক্ষেত্রে বীমা খরচ এবং লকার খরচ দুটোই প্রযোজ্য, কারণ সাধারণত সোনার বার কেউ বাড়িতে রাখেন না। এক্ষেত্রেও হয়তো পরে লাভবান হওয়া যায় কিন্তু তা সোনার ওপর প্রযোজ্য মূলধনী কর  এবং সম্পত্তি কর-এর আওতাভুক্ত। 


এবার আসা যাক  গোল্ড ইটিএফ এর বিষয়ে – 

• কিনতে বা বিক্রি করতে সাধারণ ব্রোকারেজ চার্জ লাগে, যা গহনা তৈরির খরচের তুলনায় নগণ্য।

• ফান্ড হাউসের খরচ ১% যা বাজার দামের অন্তর্গত। 

•গোল্ড ইটিএফ মূল্ধনী করের আওতায় পরে, কিন্তু সম্পত্তি কর প্রযোজ্য নয়। 

•গোল্ড ইটিএফ-এ বীমা বা লকারের সুরক্ষার প্রয়োজন পড়ে না। 

•গোল্ড ইটিএফ সাধারণ ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট-এ অন্যান্য বিনিয়োগের সঙ্গে রাখা যায়। খরচ যৎসামান্য।

• ইটিএফ বন্ড যেহেতু দীর্ঘ্যমেয়াদি বিনিয়োগ, সুতরাং ভবিষ্যতের সুরক্ষাতেও কার্যকরী। 

সোনা বা সুবর্ণ – এই উজ্জ্বলতম ধাতু শুধুমাত্র অলংকার হয়ে সৌন্দর্য্য প্রদান করে না, জীবনের সর্বাঙ্গীন সুরক্ষায় গোল্ড ইটিএফ এর বিনিয়োগমূল্য অপরিসীম। 

আরও জানতে ফোন করুন এই নম্বরে +91 9051052222 বা ইমেল করুন [email protected] এ।

অনিন্দিতা চক্রবর্তী (তথ্য : দেবরাজ গুহ ঠাকুরতা)

Share With

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *