নজরে বাজেট

নজরে বাজেট

সরকারি ব্যয় বাড়িয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করায় জোর

১৯৩০-এর দশকে বিশ্বজোড়া মহামন্দা কাটিয়ে উঠতে প্রখ্যাত ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ জন মেনার্ড কেইনসের নিদান মেনেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন আগামী সোমবার তাঁর বাজেট প্রস্তাবনা পেশ করতে পারেন। অন্তত, সেই উপদেশই তাঁকে দিয়েছেন দেশের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা থেকে শুরু করে নীতি আয়োগ সকলে।

কেইনস বলেছিলেন, চরম মন্দার সময় চাহিদার অভাবে যখন বেসরকারি লগ্নি কর্পূরের মতো উবে যায়, তখন কেবল সরকারই পারে ব্যয় বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনীতিতে সেই চাহিদা ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে।

কোভিড-১৯ অতিমারীর কারণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভারত সহ গোটা বিশ্ব এখন সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক মন্দার সম্মুখীন, সম্প্রতি এই অভিমত জানিয়েছে বিশ্বব্যাঙ্ক। কোভিড অতিমারী আর লকডাউনের কারণে ক্রেতারা খরচ করার ব্যাপারে অতিসংযমী হয়ে পড়েছেন। ফলে, চাহিদা তলানিতে নেমে এসেছে। আর, চাহিদা না থাকায় বেসরকারি শিল্পলগ্নিও থমকে গিয়েছে।

এই প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী সোমবার যে বাজেট পেশ করবেন তা ‘শতাব্দীর নজিরবিহীন’ হবে বলে গত ডিসেম্বরেই মন্তব্য করেছিলেন। আসুন দেখে নেওয়া যাক, কোন কোন শিল্পক্ষেত্রে জোর দেওয়া হতে পারে এই বাজেটে।

‘আত্মনির্ভর ভারত অভিযান’ 

কোভিড কালে ঘোষিত ত্রাণ প্যাকেজের সূত্র ধরে বাজেটেও যে ‘আত্মনির্ভর ভারত অভিযান’ সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। 

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই ‘আত্মনির্ভর’ দৃষ্টিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হল, দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্র। ইতিমধ্যেই ১০১টি প্রতিরক্ষা ও মিলিটারি সরঞ্জাম আমদানি ২০২৩-২৪ সালের মধ্যে পুরোপুরি বন্ধ করে দেশেই ওই সমস্ত সরঞ্জাম উৎপাদন করার কথা দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গত বছর ঘোষণা করেছিলেন। চিন ও পাকিস্তান দুই সীমান্তেই অশান্ত পরিবেশের কথা মাথায় রেখে, সোমবার বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ বেশ কিছুটা বাড়াতে পারেন এবং এই ক্ষেত্রে বেসরকারি লগ্নি উৎসাহিত করতে বিশেষ সুবিধা ঘোষণা করতে পারেন। 

পিএলআই স্কিমের সম্প্রসারণ

ভারতকে বিশ্বের ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হিসাবে গড়ে তুলতে গত বছর কেন্দ্রীয় সরকার প্রোডাক্টিভিটি লিঙ্কড ইনসেন্টিটিভ স্কিম (পিএলআই) বা উৎপাদনশীলতা-নির্ভর উৎসাহ প্রকল্প শুরু করে। মোবাইল, ওসুধ এবং কিছু চিকিৎসা সরঞ্জাম তৈরিতে প্রাথমিক সাফল্য পাওয়ার পর ওই পিএলআই প্রকল্পের আওতায় এ বার আরও অনেক শিল্পক্ষেত্রকে, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পক্ষেত্রকে, আনা হতে পারে। এর মধ্যে গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরি, বস্ত্রবয়ন, বৈদ্যুতিন পণ্য, খেলনা, প্রভৃতি থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। 

পরিকাঠামোয় বিশেষ জোর

বাজেটে বিশেষ জোর দেওয়া হবে পরিকাঠামো উন্নয়ন ও বিনিইয়োগে। কেননা, ভারতকে বিশ্বের ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হিসাবে গড়ে তুলতে হলে উন্নত পরিকাঠামো যেমন আবশ্যিক, তেমনি সড়ক, সেতু, বন্দর প্রভৃতি পরিকাঠামো শিল্প শ্রম-নির্ভর হওয়ায় দ্রুত কর্মসংস্থানও তৈরি হবে। তাছাড়া, পরিকাঠামো তৈরি বাড়লে সিমেন্ট, স্টিল প্রভৃতি সংশ্লিষ্ট শিল্পগুলিতেও চাহিদা বাড়বে। 

কর্মসংস্থান বাড়াতে এবং সিমেন্ট, স্টিল প্রভৃতি সংশ্লিষ্ট শিল্পে লগ্নি বাড়াতে বিশেষ জোর দেওয়া হতে পারে আর একটি শ্রম-নির্ভর শিল্প আবাসন ও রিয়েল এস্টেট এর উপর।

নজরে স্বাস্থ্য পরিষেবা

কোভিড অতিমারী এ দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবার বেহাল দশা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। প্রতি ১০০০০ ব্যক্তিপিছু এ দেশে হাসপাতাল শয্যা সংখ্যা মাত্র ৫ এবং ডাক্তারের সংখ্যা ৮.৬!  ২০২০-২১ অর্থনৈতিক সমীক্ষাতেও স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বরাদ্দ আড়াই-তিনগুণ বাড়িয়ে জিডিপির ২.৫%-৩% করার সুপারিশ করা হয়েছে। ছোট শহর ও গ্রামীণ এলাকায় নতুন হাসপাতাল তৈরির মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো মজবুত করার পাশাপাশি এ দেশে ওষুধের ‘নভেল মলিক্যুল’ তৈরির গবেষণার জন্য বিশেষ সুবিধা বাজেটে ঘোষণা করা হতে পারে। 

ক্রেতা চাহিদা বাড়াতে ব্যবস্থা  

কোভিড কালে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী একাধিক দফায় যত ত্রাণ প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন তার সিংহভাগ ছিল লকডাউনের ফলে ভেঙে পড়া জোগান ব্যবস্থা মেরামত করার লক্ষ্যে। দেশের আম আদমির ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ পদক্ষেপ তেমন নেওয়া হয়নি। আনলকডাউনের পর বাজারে যে চাহিদা বৃদ্ধি দেখা গিয়েছে তার বেশির ভাগটা এসেছে গ্রামীণ ক্ষেত্র থেকে, কৃষি ও কৃষি সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের ৩.৪% বৃদ্ধির জন্য। লকডাউনে যে লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থান হারিয়েছে তা মূলত শহরাঞ্চলে। কোভিড সঙ্কট কাটিয়ে অর্থনীতির সেরে ওঠাকে বলশালী করতে হলে শহরবাসীর চাহিদা ফিরিয়ে আনতে হবে। সেই লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বাজেটে ব্যক্তিগত আয়করে কিছু সংশোধন করতে পারেন। তবে, সেটা নয়া কর কাঠামো কেন্দ্রিক হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। কেননা, পার্সোনাল এবং কর্পোরেট কর  ব্যবস্থায় সংস্কার আনতে কেন্দ্রীয় সরকার গত বছর সমস্ত করছাড়ের সুবিধা তুলে দিয়ে কম হারে কর দেওয়ার ব্যবস্থা শুরু করে। 

ক্রেতাচাহিদা বাড়ানোর কোনও প্রস্তাব বাজেটে থাকলে লাভবান হবে ভোগ্যপণ্যের সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলি। 

আরও জানতে ফোন করুন এই নম্বরে +91 9051052222 বা ইমেল করুন [email protected]

পরিচয় গুপ্ত

Share With

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *