১৯২৬ সাল ভারতবর্ষ শুধুমাত্র স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখছে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের এই নাগপাশ থেকে বেরোনোর জন্য চারপাশে নানান আন্দোলন। ব্যবসা বাণিজ্য সব কিছুই তখন অস্থির সময়ের দলিল মাত্র। বাপু মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল যমুনালাল বাজাজের যিনি বাজাজ কোম্পানির মালিক ছিলেন অথচ স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য ব্যবসায় মনোযোগ দিতে পারতেন না। মহাত্মা গান্ধী তাঁকে পুত্র স্নেহে দেখতেন। যদিও সেই মুহুর্ত্বে তাঁর ব্যবসা একেবারেই নতুন কিন্তু তাতে তিনি মনোযোগ দিতে পারতেন না স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য। ভারতে স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে এমন অনেক ব্যবসায়িক সংগ্রামের কথা লেখা আছে।
১৯৪২ সালে ‘যমুনালাল বাজাজের‘ ছেলে ‘কমলায়ন বাজাজ’ মাত্র ২৭ বছর বয়সে ব্যবসার রাশ ধরেন। তিনি বাজাজ অটো এবং বাজাজের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। তিনিও গান্ধীজির অত্যন্ত কাছের মানুষছিলেন। ১৯৪২ সালে প্রতিষ্ঠা হলেও ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর তিনি ব্যবসায় সম্পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারেন।
‘বাজাজ অটো গ্রুপ’ শুরু হয় দুই চাকার এবং তিন চাকার যান সরবরাহ করা দিয়ে। ১৯৫৯ সালে বাজাজ কোম্পানি নিজস্ব দুই চাকা এবং তিন চাকা যান উৎপাদনের বরাত পান। ১৯৭২ সাল বাজাজের অধ্যায় এক স্বর্ণফলক তৈরী করে। ১৯৭০ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ভারতবর্ষে “বাজাজ চেতক” অত্যন্ত আকর্ষণীয় এক স্কুটার – সেই সময় যুবক কুলের কাছে এক আকর্ষণের নাম।
জাপানি সংস্থা “কাওয়াসাকি” ১৯৮৪ সালে বাজাজ মোটর সাইকেল এর সঙ্গে জুটি বাঁধে। ফলাফল হিসেবে ভারতবর্ষের বাজারে আবির্ভাব হয় “বাজাজ কাওয়াসাকি বক্সার” এর। যা আবার নতুন করে ভারতবর্ষের তরুণ যুব সমাজের ইচ্ছের গতি বাড়িয়েছিল। বছরের পর বছর এই স্বপ্ন উড়ানের ফলে বাজাজ ব্যবসায়িক দিক থেকে অত্যন্ত লাভবান হয়।
১৯৯০ সালের শেষের দিকে বাজাজ নিজেদের গবেষণাগারে বিভিন্ন পরীক্ষামূলক মডেল (বাইক,স্কুটার,অটো) তৈরী করা শুরু করে। যদিও ‘কাওয়াসাকির’ সঙ্গে যৌথ ব্যবসা ২০০৯ সাল পর্যন্ত চলেছিল, তারপর এই দুই সংস্থা নিজেদের চুক্তিতে একটু রদবদল করে, ঠিক হয় “কাওয়াসাকি” বাজাজের মধ্যস্থতায় নিজেদের বাইক বিক্রি করবে যার ফলে “কাওয়াসাকি”র ১৩ টি আলাদা মডেল ভারতবর্ষে ব্যবসা করতে শুরু করে। এই ব্যবসায়িক মধ্যস্থতায় “বাজাজ” এবং “কাওয়াসাকি” দুজনেই লাভবান হন। ২০১৭ সালে “কাওয়াসাকি” বাইক যথেষ্ট প্রতিযোগিতায় পরে “কেটিএম” বাজাজের সঙ্গে।
“বাজাজগ্রুপ” অসংখ্য সাফল্যের সাক্ষী “বাজাজ পালসার”, “বাজাজ এভেন্চার”, “বাজাজ ডিসকভার”। অনেক রাইডিং ক্লাব বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বাজাজ এভেন্চার, বাজাজ পালসার-এর উপর চোখ বন্ধ করে ভরসা করে। এ এক বৈপ্লবিক অধ্যায় মোটর সাইকেল জগতে চোখ ধাঁধানো নকশা এবং অবশ্যই যন্ত্রের ক্ষেত্রে।
“বাজাজ ভি” ২০১৬সালে শুরু হয়। ১৯৭১ সালে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ ব্যবহৃত যুদ্ধজাহাজ “আই এন এস ভিক্রান্ত”, তার ধাতুর অংশ দিয়ে তৈরী হয় “বাজাজ ভি”। এই বিশেষ মডেলটি বাজাজের ব্যবসায়িক পরিকল্পনায় আর একটি মজবুত দিক সামনে আনে।
বিজ্ঞাপন জগতে “হামারা বাজাজ” এক অন্য আকর্ষণ বিন্দু তৈরী করে। সমস্ত বিজ্ঞাপন ভারতবর্ষের সামাজিক গঠন পরিকল্পনা করে তৈরী করা হত যা অনেক দেশকে ভারতীয় সম্পর্ক, ভারতীয় মূল্যবোধ বুঝতে সক্ষম করেছে।
এখন বাজাজ মোটর সাইকেলের তিনটি জায়গায় কারখানা রয়েছে। দুটি “বালুজে” (ঔরঙ্গাবাদ), একটি “চাকান”(পুনে, মহারাষ্ট্র) এবং আর একটি “পন্থ নগর” (উত্তরাঞ্চল)। বাজাজ দুই ও তিন চাকাউৎপাদনে সারা পৃথিবীতে চতুর্থ স্থানাধিকারী। এই সংস্থা সরবরাহ করে পঞ্চাশটি দেশে – যথা লাতিন আমেরিকা, মধ্য প্রাচ্য, দক্ষিণ এবং দক্ষিণপশ্চিম এশিয়া, শ্রীলংকা, বাংলাদেশ, মেক্সিকো, মধ্য আমেরিকা ,পেরু এবং ইজিপ্ট।
“জব মে ছোটা বাচ্চা থা — অব মে বুড়হা হু” এই বিখ্যাত বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনের মতো আপামর ভারতবর্ষে আজও দাপিয়ে চলছে “বাজাজ” -“হামারা বাজাজ”।
আরও জানতে ফোন করুন এই নম্বরে +91 9051052222 বা ইমেল করুন [email protected]
–মেলভিন পিনটো (অনুলিখন : অনিন্দিতা চক্রবর্তী)