ডিভিডেন্ড আয়ে কর দিতে হবে আপনাকেই

ডিভিডেন্ড আয়ে কর দিতে হবে আপনাকেই

 ১৫ মার্চ শেষ অগ্রিম করের কিস্তির তারিখ 

১ এপ্রিল ২০২০ থেকে আর ডিভিডেন্ড আয় আপনার হাতে করমুক্ত নয়। শেয়ার অথবা ইকুইটি ও ডেট মিউচুয়াল ফান্ড থেকে ডিভিডেন্ড পেলে সেটা আপনাকে ‘ইনকাম ফ্রম আদার সোর্স’ বা ‘অন্য উৎস থেকে আয়’ হিসাবে মোট বার্ষিক আয়ে যোগ করে তার ওপর আয়কর, অর্থাৎ, ডিভিডেন্ড আয়ে কর দিতে হবে।

গত বছর মার্চ পর্যন্ত ডিভিডেন্ড আয়ের ওপর আপনাকে কোনও কর দিতে হতো না। কেননা, যে কর্পোরেট সংস্থা বা মিউচুয়াল ফান্ড হাউস ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে তাকে ডিভিডেন্ড ডিস্ট্রিবিউশন ট্যাক্স (ডিডিটি) দিতে হতো।  

২০২০-২১ অর্থবছরের ফিনান্স অ্যাক্টে ওই ডিডিটি তুলে দেওয়া হয়েছে এবং ডিভিডেন্ড আয়ে কর দেওয়ার দায় চাপানো হয়েছে ডিভিডেন্ড প্রাপক ব্যক্তি, হিন্দু যৌথ পরিবার বা সংস্থার ওপর। 

ফলে, আয়কর আইনের ১১৫বিবিডিএ ধারায় বছরে ১০ লক্ষ টাকার বেশি ডিভিডেন্ড পাওয়ার জন্য ডিভিডেন্ড প্রাপককে আগে যে ১০% কর দিতে হতো সেই ধারাও এখন তাৎপর্যহীন। 

তবে, যে সমস্ত শেয়ারহোল্ডার বা ইউনিট হোল্ডার ৫,০০০ টাকার বেশি ডিভিডেন্ড পাবেন তাঁদের ওই লভ্যাংশ থেকে ডিভিডেন্ড ঘোষণাকারী সংস্থা বা মিউচুয়াল ফান্ডকে ১০% টিডিএস কেটে রাখার কথা বলা হয়েছে ২০২০-২১ অর্থবছরের ফিনান্স অ্যাক্টে। অবশ্য ২০২০-২১ অর্থবছরে কোভিডের কারণে গত ১৪ মে থেকে ওই টিডিএসের হার ১০% থেকে কমিয়ে ৭.৫% করেছে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক। 

ডিভিডেন্ডের ওপর এই টিডিএস আপনার অন্য আয় থেকে কেটে নেওয়া টিডিএসের সঙ্গে ফর্ম ২৬এএসে প্রতিফলিত হবে। সেক্ষেত্রে, আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় ফর্ম ২৬ এএসে থাকা টিডিএস তথ্য মিলিয়ে নিন। 

আপনি যে ডিভিডেন্ড পেয়েছেন তার জন্য আপনি যদি ঋণ করে লগ্নি করে থাকেন তবে, সেই ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য ডিভিডেন্ড আয়ের সর্বাধিক ২০% ছাড় দাবি করতে পারেন। 

ধরা যাক, আপনি ব্যাঙ্ক থেকে টাকা ধার করে সেই টাকা ‘এ’ কোম্পানির শেয়ারে লগ্নি করলেন। এর পর ‘এ’ কোম্পানি ডিভিডেন্ড ঘোষণা করল এবং আপনার প্রাপ্য হল ৮,০০০ টাকা। আপনার ডিভিডেন্ডের পরিমাণ ৫০০০ টাকার বেশি হওয়ার কারণে, ‘এ’ কোম্পানি ৭.৫% বা ৬০০ টাকা টিডিএস কেটে বাকি ৭,৪০০ টাকা আপনাকে ডিভিডেন্ড দেবে। ওই ৭,৪০০ টাকা ডিভিডেন্ডের সর্বাধিক ২০% বা ১৪৮০ টাকা ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য আপনি ছাড় দাবি করতে পারেন।  

অন্য আয়ের সঙ্গে ডিভিডেন্ড যোগ করে আপনার মোট বার্ষিক ‘ট্যাক্স লায়াবিলিটি’ বা করের দায় যদি ১০,০০০ টাকার বেশি হয়, তবে সেই কর আপনি বছরের শেষে এসে একলপ্তে জমা করতে পারবেন না। মোট কর আপনাকে চার কিস্তিতে — ১৫ জুন, ১৫ সেপ্টেম্বর, ১৫ ডিসেম্বর এবং ১৫ মার্চ — ‘অ্যাডভান্স ট্যাক্স’ বা অগ্রিম কর হিসাবে মেটাতে হবে। 

শুধু তাই নয়, কম ‘অ্যাডভান্স ট্যাক্স’ দিলে বা কিস্তি মেটানোর নির্ধারিত তারিখের মধ্যে ওই ‘অ্যাডভান্স ট্যাক্স’ দিতে না পারলে আয়কর আইনের ২৩৪সি ধারায় বকেয়া করের ওপর প্রতি মাসে ১% হারে সুদ দিতে হবে পরের অ্যাডভান্স ট্যাক্স মেটানোর তারিখ অথবা অর্থবছরের শেষ অবধি। 

কিন্তু, মুশকিল হল বছরে কত টাকা ডিভিডেন্ড পাবেন সেটা আগে থেকে হিসাব করবেন কী করে? এই জটিলতায় অনেকেই প্রাপ্ত ডিভিডেন্ডের চেয়ে কম হিসাব করে কর দিয়েছেন অথবা বেশি হিসাব করে কর দিয়েছেন। বেশি কর দিয়ে থাকলে আয়কর রিটার্ন জমার সময় সেই অতিরিক্ত কর ফেরত দাবি করতে পারেন। কম দিয়ে থাকলে সেই ঘাটতি আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে মিটিয়ে দিতে হবে।

আগামী বছর থেকে অবশ্য এই জটিলতা থাকবে না। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে আপনার আয়কর রিটার্নে ক্যাপিটাল গেইনস, ডিভিডেন্ড আয়, সুদ আয় প্রভৃতি প্রি-ফিলড বা আগে থেকেই পূরণ করা থাকবে।   

সময়ে অগ্রিম কর না দেওয়ায় জরিমানা

অগ্রিম করের তারিখঅগ্রিম করের পরিমাণকিস্তি দিতে না পারলে সুদযার ওপর সুদ দিতে হবে
১৫ জুনঅগ্রিম করের ১৫%১% হারে তিন মাস১৫% অগ্রিম কর – ১৫ জুন অবধি যত কর দিয়েছেন
১৫ সেপ্টেম্বরঅগ্রিম করের ৪৫%১% হারে তিন মাস৪৫% অগ্রিম কর – ১৫ সেপ্টেম্বর অবধি যত কর দিয়েছেন
১৫ ডিসেম্বরঅগ্রিম করের ৭৫%১% হারে তিন মাস৭৫% অগ্রিম কর – ১৫ ডিসেম্বর অবধি যত কর দিয়েছেন
১৫ মার্চঅগ্রিম করের ১০০%১০০% অগ্রিম কর – ১৫ মার্চ অবধি যত কর দিয়েছেন

অগ্রিম করের হিসাব যেভাবে করা হয়ে থাকে

পেশা থেকে আয়১০,০০,০০০ টাকা
ওই আয়ের জন্য খরচ২,০০,০০০ টাকা৮,০০,০০০ টাকা
অন্য সূত্রে আয়
ব্যাঙ্ক আমানতে সুদ৫০,০০০ টাকা
ডিভিডেন্ড২০,০০০ টাকা
মোট আয়৮,৭০,০০০ টাকা
৮০সি ধারায় বিনিয়োগ১,৫০,০০০ টাকা
মোট কর যোগ্য আয়৭,২০,০০০ টাকা
কর৫৬,৫০০ টাকা
শিক্ষা কর (৪%)২,২৬০ টাকা
মোট কর দিতে হবে৫৮,৭৬০ টাকা
টিডিএস দেওয়া হয়েছে২৮,৭৬০ টাকা
অগ্রিম কর দিতে হবে৩০,০০০ টাকা


কর দেওয়ার নির্ঘণ্ট

১৫ জুন৪,৫০০ টাকা৪,৫০০ টাকা
১৫ সেপ্টেম্বর৯,০০০ টাকা১৩,৫০০ টাকা
১৫ ডিসেম্বর৯,০০০ টাকা২২,৫০০ টাকা
১৫ মার্চ৭,৫০০ টাকা৩০,০০০ টাকা

ডিভিডেন্ড আয়ে কর সম্বন্ধে আরও জানতে ফোন করুন এই নম্বরে +91 9051052222, বা ইমেল করুন [email protected] এ।

– পরিচয় গুপ্ত

Share With

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *