বিনিয়োগ সাফল্যের মন্ত্রগুপ্তি হল, মূলধন এবং মুনাফা দুইই বাঁচানো। কিন্তু, যে কোনও ধরনের স্থাবর অথবা অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে মুনাফা হলে ‘ক্যাপিটাল গেইনস’ হিসাবে সেই মুনাফার ওপর কর দিতে হবে।
১) ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্সের সুবিধা বেশি ইক্যুইটি লগ্নিতে
সম্পত্তি | <১২ ম্যাস | ১২–২৪ মাস | ২৪–৩৬ মাস | >৩৬ মাস |
শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত কোনও সংস্থার ইক্যুইটি* | ১৫% | ১০% | ১০% | ১০% |
ইউনিট ট্রাস্টের ইউনিট | ১৫% | ১০% | ১০% | ১০% |
ইক্যুইটি মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট | ১৫% | ১০% | ১০% | ১০% |
জিরো কুপন বা ডীপ ডিসকাউন্ট বন্ড | করদাতার আয়করের প্রান্তিক হার | ১০% | ১০% | ১০% |
শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত নয় এমন সংস্থার শেয়ার** | করদাতার আয়করের প্রান্তিক হার | করদাতার আয়করের প্রান্তিক হার | ১) অনাবাসীদের জন্য ১০% ইন্ডেক্সেশনের সুবিধা ছাড়া২) ভারতে বসবাসকারীদের জন্য ২০% ইন্ডেক্সেশনের সুবিধা সহ | ১) অনাবাসীদের জন্য ১০% ইন্ডেক্সেশনের সুবিধা ছাড়া২) ভারতে বসবাসকারীদের জন্য ২০% ইন্ডেক্সেশনের সুবিধা সহ |
জমি–বাড়ি | করদাতার আয়করের প্রান্তিক হার | করদাতার আয়করের প্রান্তিক হার | ২০% ইন্ডেক্সেশনের সুবিধা সহ | ২০% ইন্ডেক্সেশনের সুবিধা সহ |
ডেট মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট | করদাতার আয়করের প্রান্তিক হার | করদাতার আয়করের প্রান্তিক হার | করদাতার আয়করের প্রান্তিক হার | ২০% ইন্ডেক্সেশনের সুবিধা সহ |
সোনার গয়না, কয়েন, ইটিএফ | করদাতার আয়করের প্রান্তিক হার | করদাতার আয়করের প্রান্তিক হার | করদাতার আয়করের প্রান্তিক হার | ২০% ইন্ডেক্সেশনের সুবিধা সহ |
শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত বন্ড/ডিবেঞ্চার | করদাতার আয়করের প্রান্তিক হার | ১) অনাবাসীদের জন্য ১০% ইন্ডেক্সেশনের সুবিধা ছাড়া২) ভারতে বসবাসকারীদের জন্য ২০% ইন্ডেক্সেশনের সুবিধা সহ | ১) অনাবাসীদের জন্য ১০% ইন্ডেক্সেশনের সুবিধা ছাড়া২) ভারতে বসবাসকারীদের জন্য ২০% ইন্ডেক্সেশনের সুবিধা সহ | ১) অনাবাসীদের জন্য ১০% ইন্ডেক্সেশনের সুবিধা ছাড়া২) ভারতে বসবাসকারীদের জন্য ২০% ইন্ডেক্সেশনের সুবিধা সহ |
**২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারির পর সংস্থাটি শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত হলে অথবা ইতিমধ্যে নথিভুক্ত কোনও সংস্থার মিশে গেলে লং-টার্ম ক্যাপিটাল গেইনস হিসাব করায় ইন্ডেক্সেশনের সুবিধা পাওয়া যাবে
২) সম্পত্তি বিক্রির ক্ষতি অ্যাডজাস্টমেন্ট কী ভাবে
ক) ‘ক্যাপিটাল লস’ কেবল ‘ক্যাপিটাল গেইনস’ থেকেই বাদ দেওয়া যাবে, অন্য কোনও আয় থেকে নয়। কোনও একটি অ্যাসেসমেন্ট বছরে পুরো ‘ক্যাপিটাল লস’ অ্যাডজাস্ট করতে না পারলে পরের আট বছর অবধি তা করা যাবে
খ) স্বল্পমেয়াদি লাভ থেকে কেবল স্বল্পমেয়াদি ক্ষতিই বাদ দেওয়া যাবে
গ) দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি কেবল দীর্ঘমেয়াদি লাভ থেকেই বাদ দিতে হবে, স্বল্পমেয়াদি লাভের সঙ্গে ‘অ্যাডজাস্ট’ করা যাবে না
ঘ) স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি দুইই অ্যাডজাস্ট করা যাবে দীর্ঘমেয়াদি লাভের সঙ্গে
৩) আয়কর রিটার্নেই দেওয়া থাকবে ক্যাপিটাল গেইনস, ডিভিডেন্ডের তথ্য
২০২১-২২ অর্থবছরের কেন্দ্রীয় বাজেট অনুযায়ী, করদাতাদের সমস্ত ক্যাপিটাল গেইনস, ডিভিডেন্ড ও ব্যাঙ্ক-পোস্টঅফিস আমানতে সুদ আয়ের তথ্য তাঁদের আয়কর রিটার্ন ফর্মে আগে থেকেই পূরণ করে রাখবে আয়কর দপ্তর
৪) ইক্যুইটিতে গ্র্যান্ডফাদারিং সুবিধা
২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারির আগে আয়কর আইনের ১০(৩৮) ইক্যুইটি বা ইক্যুইটি মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটে লং-টার্ম ক্যাপিটাল গেইনস সম্পূর্ণ করমুক্ত ছিল। ওই তারিখের আগে যারা শেয়ার বা ইক্যুইটি মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট কিনেছিলেন তারা যাতে ৩১ জানুয়ারি, ২০১৮ অবধি ১০(৩৮) ধারার সুবিধা নিতে পারেন তার জন্য সরকার একটি টু-স্টেপ ফর্মূলা নির্ধারণ করেছে। ওই ফর্মূলা অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারির আগের কেনা শেয়ার বা ইক্যুইটি মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দাম ৩১ জানুয়ারির (২০১৮) সর্বোচ্চ দামের ভিত্তিতে লগ্নির ‘ফেয়ার মার্কেট ভ্যালু’ এবং ক্যাপিটাল গেইনসের পরিমাণ বের করা হয়।
ওই টু-স্টেপ ফর্মূলা হল এই রকমঃ
১) ফেয়ার মার্কেট ভ্যালু বা লগ্নি বিক্রির অঙ্কের মধ্যে যেটি কম এবং
২) প্রথম স্টেপে যে মূল্য নির্ধারিত হল এবং প্রকৃত লগ্নির পরিমাণের মধ্যে যেটি বেশি।
ধরুন, ২০১৫ সালের অগস্ট মাসে মিস্টার X একটি সংস্থার ১০০০ শেয়ার কিনেছিলেন মোট ৫ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে। তিনি ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে ওই শেয়ারগুলি ২০ লক্ষ টাকায় বিক্রি করলেন। তাঁকে কত টাকা ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্স দিতে হবে?
এখানে, মিস্টার X-এর
প্রকৃত লগ্নি (২০১৫ সালে) = ৫ লক্ষ টাকা,
লগ্নি বিক্রির পরিমাণ (২০২০ সালে) = ২০ লক্ষ টাকা।
২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারির দরে লগ্নির পরিমাণ বা লগ্নির ফেয়ার মার্কেট ভ্যালু = ১৮ লক্ষ টাকা।
স্টেপ ১ঃ ফেয়ার মার্কেট ভ্যালু এবং লগ্নির বিক্রির পরিমাণের মধ্যে কম = ১৮ লক্ষ টাকা।
স্টেপ ২ঃ স্টেপ ১-এ পাওয়া মূল্য এবং প্রকৃত লগ্নির মধ্যে বেশি = ১৮ লক্ষ টাকা।
অতএব, মিস্টার X এর দীর্ঘমেয়াদি ক্যাপিটাল গেইনসের পরিমাণ = বিক্রির দাম – কেনার দাম (সংশোধিত) = ২০ লক্ষ টাকা – ১৮ লক্ষ টাকা = ২ লক্ষ টাকা
তাঁর করযোগ্য দীর্ঘমেয়াদি ক্যাপিটাল গেইনস
= ২ লক্ষ টাকা – ১ লক্ষ টাকা (১১২এ ধারায় ছাড়)
= ১ লক্ষ টাকা
লং-টার্ম ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্সের পরিমাণ
= ১ লক্ষ টাকার ১০% = ১০,০০০ টাকা।
৫) লং-টার্ম ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্স বাঁচানোর উপায়
ক) জমি-বাড়া ছাড়া অন্য যে কোনও সম্পত্তি (শেয়ার বা ইক্যুইটি মিউচুয়াল ফান্ড সহ) বিক্রি করে লং-টার্ম ক্যাপিটাল গেইনস হলে, সম্পত্তি বিক্রির পুরো টাকা দ্বিতীয় বাড়ি কেনায় বিনিয়োগ করলে আয়কর আইনের ৫৪এফ ধারায় লং-টার্ম ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্স ছাড় পাওয়া যায়। তবে, এই ধারায় ছাড় পেতে হলে করদাতার (লগ্নির আগে) নিজের একটি মাত্র বসত বাড়ি থাকতে হবে।
খ) শেয়ার বা মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে বছরে কেবল এক লক্ষ টাকার বেশি লং-টার্ম ক্যাপিটাল গেইনসের উপরই কর দিতে হয়। অর্থাৎ, আপনি যদি এমন হিসাব করে প্রতি বছর আপনার শেয়ার বা মিউচুয়াল ফান্ডের লগ্নি থেকে ১ লক্ষ টাকার কম লাভ হয়, তবে আপনাকে কোনও লং-টার্ম ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্স দিতে হবে না।
অন্যথায়, আপনি যদি আপনার স্ত্রী বা প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানকে টাকা/শেয়ার/ইক্যুইটি মিউচুয়াল ফান্ড গিফট করেন এবং তাঁরা প্রতি বছর ১ লক্ষ টাকার কম লাভে ওই শেয়ার/ইক্যুইটি মিউচুয়াল ফান্ড বিক্রি করেন, তবে দ্বিতীয় বছর থেকে আপনারা তিনজনে (আপনি, আপনার স্ত্রী ও আপনার সন্তান) বছরে মোট ৩ লক্ষ টাকা অবধি লং-টার্ম ক্যাপিটাল গেইনসে কর সাশ্রয় করতে পারেন।
আরও জানতে ফোন করুন এই নম্বরে +91 9051052222 বা ইমেল করুন [email protected] এ।
– পরিচয় গুপ্ত