সন্তানদের শিক্ষার জন্য দুশ্চিন্তা? বিনিয়োগেই অবসান!

সন্তানদের শিক্ষার জন্য দুশ্চিন্তা? বিনিয়োগেই অবসান!

ডাক্তার হবে, নাকি ইঞ্জিনিয়ার? – নাকি এমবিএ পাশ করে আপনার ছেলে-মেয়ে দেশে-বিদেশে ভালো চাকরি করবে! এই স্বপ্ন বা ইচ্ছে এখন মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত সকল বাবা-মাদের। এই স্বপ্ন মেটাতে যেমন দরকার ছেলে মেয়ের প্রচেষ্টা, তেমনি দরকার মা-বাবার সহযোগিতা। মানসিক এবং অর্থনৈতিক – দুদিক দিয়েই।

সমস্যাটি হয় দ্বিতীয় ক্ষেত্রে, যখন সঠিক পরিকল্পনার অভাবে শেষ মুহূর্তে জমানো সব পুঁজি তুলে দিতে হয় সন্তানের স্বার্থে। 

তার চেয়ে ভালো নয় কি আগে থেকে একটা পরিকল্পনা করে এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জমিয়ে রাখা, যাতে সঠিক সময়ে সেটি সঠিক উদ্দেশ্যে বাবহার করা যায়!

তাহলে জেনে নিই  কিভাবে করা যাবে সেই পরিকল্পনা –

সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা বা এসএসওয়াই:

ভারত সরকারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এটি  সবচেয়ে লাভজনক একটি যোজনা/স্কিম, কারণ এখানে আপনার বিনিয়োগটি চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকে। সরকার দ্বারা পরিচালিত বলেই  এখানে আপনার পুঁজিটি সুরক্ষিত এবং রিটার্ন গ্যারান্টি-যুক্ত। আপনি যদি এখন, অর্থাৎ ২০২২-২৩ সালে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) এখানে বিনিয়োগ করেন, তাহলে আপনার জমানো টাকা এখন থেকে ৭.৬% চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকবে ।

কারা  বিনিয়োগ করতে পারবেন –

  • কেবলমাত্র কন্যা সন্তানের নামে এই অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে। 
  • কন্যা-সন্তানের বাবা-মা, অথবা আইন-গত অভিভাবক এটি খুলতে পারবেন। 
  • কন্যা সন্তানের জন্মানোর পর থেকে ১০ বছরের মধ্যে আপনাকে এই  অ্যাকাউন্ট খুলে নিতে হবে।
  • একটি  পরিবারে শুধু দুটো অ্যাকাউন্টই  খোলা সম্ভব। তবে কিছু ক্ষেত্রে এর  ব্যাতিক্রম আছে।


কোথায় এবং কিভাবে বিনিয়োগ করবেন 

আপনি আপনার সুবিধে মতো দেশের যেকোনো জায়গাতে, যেকোনো রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্ক, পোস্ট-অফিস, প্রাইভেট ব্যাঙ্ক-এ কেবলমাত্র কেওয়াইসি ডকুমেন্টস, এবং সঙ্গে কন্যা সন্তানের জন্ম পরিচয়-পত্র দিয়ে  এই অ্যাকাউন্ট খুলে নিতে পারবেন।

শুধু মাত্র ২৫০ টাকা দিয়ে আপনি  বিনিয়োগ শুরু করতে পারবেন, এবং সর্বোচ্ছ ১৫০০০০ টাকা অবধি প্রতি বছরে জমা করতে পারবেন।

কর ছাড় 

এখানে আয়কর আইনের ৮০সি ধারা অনুযায়ী কর ছাড়-এর সর্বোচ্চ অর্থাৎ ত্রিস্তর সুবিধা আছে। মানে – আপনি যত টাকা বিনিয়োগ করবেন প্রতি বছর, যত টাকা মোট সুদ হিসাবে  পাবেন, এবং মেয়াদ শেষে মোট যত টাকা পাবেন, কোনো ক্ষেত্রেই আপনাকে কোনো আয়কর দিতে হবে না।

পিপিএফ (পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড):

সরকার দ্বারা পরিচালিত, আপনার বিনিয়োগ-কে চক্রবৃদ্ধি হারে বৃদ্ধি করবার আরো একটা লাভজনক স্কিম  হলো পিপিএফ, এখানে সূদের হার  বর্তমানে (২০২২-২৩) ৭.১০%।

কারা বিনিয়োগ করতে পারবেন

স্কিম-টির নামের মধ্যেই রয়েছে, যে কারা এখানে বিনিয়োগ করতে পারবেন। দেশের যেকোনো আবাসিক নাগরিক এখানে বিনিয়োগ করতে পারবেন, এবং এখানে বয়সের কোনো বিধি -নিষেধ নেই।কেবলমাত্র ১৮ বছরের নিচের বয়সীদের ক্ষেত্রে, তাদের অভিভাবককে অ্যাকাউন্টের তত্ত্বাবধান করতে হবে।

কোথায় এবং কিভাবে বিনিয়োগ করবেন 

যেকোনো রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্ক, প্রাইভেট ব্যাঙ্ক, পোস্ট-অফিস-এ আপনি এই অ্যাকাউন্ট খুলে নিতে পারেন, ন্যূনতম কেওয়াইসি ডকুমেন্টস দিয়েই।

৫০০ টাকা দিয়ে আপনি আপনার বিনিয়োগ শুরু করতে পারেন, এবং এখনেও সর্বোচ্চ  ১৫০০০০ টাকা প্রতি বছর জমা করতে পারবেন।

কর ছাড়

এখানেও আপনি আয়করের এর সর্বোচ্চ ছাড় পাবেন (আয়কর আইনের ৮০সি)। মানে আপনাকে কোনো কর দিতে হবে না।

এসআইপি (সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান):

এই কথাটার সঙ্গে কম-বেশি এখন সবাই পরিচিত। ভারত সরকারের অধীনে সেবি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত মিউচুয়াল ফান্ড-এ আপনার টাকা বৃদ্ধি করার এটা হলো সবচেয়ে সহজ উপায়। বাজারগত ঝুঁকি থাকলেও, আপনার কাছে বিনিয়োগ করার জন্য যদি লম্বা সময় থাকে, আপনি সহজেই এই ঝুঁকি কাটিয়ে এখান থেকে মোটা অংকের রিটার্ন পেতে পারেন।

কারা বিনিয়োগ করতে পারবেন 

দেশের সকল নাগরিক এখানে বিনিয়োগ করতে পারবেন। এবং এখানে বয়সের কোনো বিধিনিষেধ নেই। কেবলমাত্র ১৮ বছরের নিচের বয়সীদের ক্ষেত্রে, তাদের অভিভাবককে  অ্যাকাউন্টের তত্ত্বাবধান করতে হবে।

কোথায় এবং কিভাবে বিনিয়োগ করবেন

মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ এখন খুব সহজেই করা যায়। আপনি আপনার ব্রোকার-এর কাছ থেকে, বা কোনো ব্যাঙ্কের কাছ থেকে বা কোনো ফিনান্সিয়াল ডিস্ট্রিবিউটার-এর সহায়তায় এখানে বিনিয়োগ করতে পারেন।

নূন্যতম ৫০০ টাকা দিয়েই আপনি শুরু করতে পারেন, তবে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ আপনার প্রয়োজন মতন করতে পারবেন।

কর ছাড়

ইএলএসএস ফান্ডে বিনিয়োগ করলে, আপনি আয়কর আইনের ৮০সি ধারায় প্রত্যেক আর্থিক বছরে ১৫০০০০ টাকা অবধি আয়কর ছাড়  পেতে পারেন। আর অন্যান্য ফান্ডে দীর্ঘ সময়ের জন্য বিনিয়োগ করলে মূলধনী কর সংক্রান্ত কিছু সুবিধা পাবেন।

এখানে তিনটি বিনিয়োগের তুলনা দেওয়া হল।

 এসএসওয়াইপিপিএফএসআইপি
রেগুলেশন সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিতসেবি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত
গ্যারেন্টি-যুক্ত রিটার্নহ্যাঁহ্যাঁ   বাজারগত ঝুঁকি আছে
বিনিয়োগ (সর্বনিম্ন-সর্বোচ্চ )            ২৫০ –  ১৫০০০০            ৫০০  –  ১৫০০০০   ৫০০  –   সীমাহীন
বিনিয়োগের সময়-সীমাসর্বোচ্ছ ১৮ বছরসর্বোচ্চ ১৫ বছর ,তারপর ৫বছর করে বাড়াতে পারবেনকোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই
রিটার্ন৭.৬০%৭.১০% বাজারের ওপর নির্ভরশীল
 আয়করের ৮০সি সুবিধাই ই ইই ই ইইএলএসএস ফান্ডে এই সুবিধা আছে

এখন প্রশ্ন হলো, আপনি কোথায় বিনিয়োগ করবেন?

বিনিয়োগের জন্য আপনার ক্ষেত্রে কোন স্কিম কতটা উপযুক্ত সেটা ঠিক করার জন্য আগে জেনে নেওয়া দরকার, যে আপনি কত দিনের জন্য বিনিয়োগ করবেন, এবং আপনি ঝুঁকি নেওয়ার জন্য কতটা তৈরি? এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করলে জানা যাবে, কোথায় এবং কিভাবে  বিনিয়োগ করলে সেটা আপনার জন্য উপযুক্ত হবে।

  • আপনি যদি বেশি ঝুঁকি নিতে পারেন ,আর আপনার বিনিয়োগ যদি অনেক দিনের জন্য হয় তাহলে আপনি মিউচুয়াল ফান্ডে এসআইপি-এর মাধ্যমে ইকুইটি ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন।
  • আবার আপনি যখন একেবারে  ঝুঁকি নিতে চাইছেন না, এবং অনেকদিন ধরে বিনিয়োগ করতে পারবেন সেক্ষেত্রে এসএসওয়াই/পিপিএফ -এ বিনিয়োগ করতে পারেন।
  • আর আপনি যদি মধ্যমপন্থার হন, তাহলে এই স্কিম-গুলোর মধ্যে হিসাব-নিকাশ করে প্রয়োজন মতো বিনিয়োগ করতে পারেন।

আরও জানতে ফোন করুন এই নম্বরে +91 9051052222  বা ইমেল করুন [email protected] এ।
কৃষ্ণেন্দু পাত্র

Share With

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *