ELSS বা ইক্যুইটি লিঙ্কড সেভিংস স্কিম এক ধরণের মিউচুয়াল ফান্ড। এই জাতীয় মিউচুয়াল ফান্ডে প্রাথমিকভাবে স্টক মার্কেট বা ইক্যুইটিতে বিনিয়োগ করা হয়। আয়কর আইন ১৯৬১-র ৮০সি ধারার অধীনে কোনও ব্যক্তি এই ELSS-এ বছরে ১,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে কর ছাড়ের সুবিধা পান। এই স্কিমের মাধ্যমে বছরে সর্বাধিক ৪৬,৮০০ টাকা পর্যন্ত কর সাশ্রয় করা যায়।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সাধারণ মানুষ বছরের শুরুতে বা জানুয়ারি মাস আসার আগে কর, বিনিয়োগ ইত্যাদি নিয়ে খুব একটা ভাবনাচিন্তা করেন না। অনেক দেরিতে তাঁদের ঘুম ভাঙে। অফিস থেকে কর সংক্রান্ত নথি জমা দেওয়ার ডাক এলে তখন তাঁরা জেগে ওঠেন। কিন্তু ততক্ষণে অনেকটাই দেরি হয়ে যায়। সেই সময়ে আর ঠিক করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরিস্থিতি থাকে না। তখন বিবেচনা করে আর্থিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার বদলে বিনিয়োগের প্রমাণ দেওয়াটাই যেন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ফলে তাড়াহুড়ো করে অনেকেই যেখানে-সেখানে বেশ কিছু টাকা বিনিয়োগ করে ফেলেন। এই তাড়াহুড়ো করতে গিয়েই সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভুল হয়ে যায়।
মনে রাখবেন, শুধু কর বাঁচানোই কিন্তু বিনিয়োগের উদ্দেশ্য নয়। স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক মুনাফা করাটাই বিনিয়োগের আসল লক্ষ্য। এর সঙ্গে কর সাশ্রয় একটি উপরি পাওনা মাত্র। তাই বিনিয়োগের আসল উদ্দেশ্য সব সময়ে ভাল রিটার্ন পাওয়া হওয়া উচিৎ। শুধুমাত্র কর সাশ্রয়কে লক্ষ্য করে শেষ মুহূর্তে বিনিয়োগ করতে গেলে সেটা ভুল হবে।
এটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে, যাতে যতটা বেশি সম্ভব কর সাশ্রয় করা যায়। কিন্তু একইসঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে রিটার্ন নিয়ে কোনওরকম আপোস করা চলবে না। তাই একজন বিনিয়োগকারী হিসাবে প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ সঠিক বিনিয়োগ। সেই সঙ্গেই যুক্ত থাকবে কর সাশ্রয়ের পরিকল্পনা।
আর্থিক বিশেষজ্ঞদের মতে, কর সাশ্রয়ের চেষ্টা করা অবশ্যই ভাল। কিন্তু কর বাঁচানোর জন্য এমন কোনও বিনিয়োগ করা উচিৎ নয়, যার জন্য পরে অনুশোচনা করতে হবে। অর্থাৎ, কর সাশ্রয়ের দিকটা বিনিয়োগ করায় প্রাপ্ত সুবিধার একটি অংশ হওয়া উচিৎ। কিন্তু শুধুমাত্র কর বাঁচাতে হবে বলে বিনিয়োগ করছেন, এমনটা যেন কখনই না হয়।
আর ঠিক সেই কারণেই ELSS-এর বিষয়ে জেনে রাখাটা অত্যন্ত জরুরি। আর্থিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ELSS বর্তমানে একটি অন্যতম প্রধান বিনিয়োগ মাধ্যম। এতে ভাল রিটার্নের সম্ভাবনা, এবং কর সাশ্রয় -দু’টিই পাবেন।
ELSS-এ কীভাবে বিনিয়োগ করবেন? এর সুবিধা ও অসুবিধা কী কী?
দুইভাবে বিনিয়োগ করা যেতে পারে,
১. এককালীন বিনিয়োগ (lumpsum): এক্ষেত্রে আপনাকে বিনিয়োগের জন্য সম্পূর্ণ টাকা জমিয়ে রাখতে হবে। সময়ের সঙ্গে সঞ্চয়ের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য এটি আদর্শ উপায় হতে পারে। তবে আপনার সম্পূর্ণ সঞ্চয় কখনই একটি খাতে বিনিয়োগ করবেন না। বিভিন্ন খাতে ভাগ করে সম্পদের বিনিয়োগ করুন।
২. সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (SIP)-এ বিনিয়োগ: এর মাধ্যমে বিনিয়োগ করার বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। প্রথমত, প্রতিমাসে একটা নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। এর ফলে আপনাকে বছরের শেষে হঠাৎ করে বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করার চাপ থাকবে না। অল্প-অল্প করেই বিনিয়োগের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারবেন। এভাবে নিয়মিত বিনিয়োগের মাধ্যমে একটি আর্থিক শৃঙ্খলাও বজায় থাকে। প্রতি মাসের বদলে ছয় মাস অন্তর বিনিয়োগের অপশনও বেছে নিতে পারেন।
সুবিধা
১. ৮০সি ধারার অধীনে কর ছাড় পাবেন। তবে এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, পুরনো কর ব্যবস্থা বেছে নিলে তবেই এই সুবিধা মিলবে। নয়া কর ব্যবস্থায় নয়।
২. লক-ইন পিরিয়ড মাত্র ৩ বছর। অন্যান্য যত কর সাশ্রয়কারী বিনিয়োগ রয়েছে, তার মধ্যে এটিই সব থেকে কম সময়ের লক-ইন পিরিয়ড। ৩ বছর পর চাইলে আপনি সম্পূর্ণ সঞ্চয় তুলে নিতেই পারেন। আবার আরও বড় সুবিধা হল, এতে সর্বোচ্চ বিনিয়োগের সময়সীমা বলে কিছু নেই।
২. দীর্ঘমেয়াদে লাভের হার অন্যান্য কর সাশ্রয়ী বিনিয়োগের তুলনায় সাধারণত বেশি হয়।
৩. দীর্ঘমেয়াদে মুদ্রাস্ফীতিকে টেক্কা দেওয়ার মতো সম্পদের সঞ্চয় গড়ে তোলা সম্ভব।
৪. গ্রোথ ফান্ড বা ডিভিডেন্ড ফান্ড, যে কোনও তহবিলেই বিনিয়োগ করা যেতে পারে।
৫. বিভিন্ন ক্ষেত্রে বহুমুখী বিনিয়োগের সুবিধা পাবেন।
৬. অতিরিক্ত আয় থাকলে, তা সেভিংস অ্যাকাউন্টে ফেলে রাখার বদলে এক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে ১,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগকে আয়করের আওতার বাইরে রাখা হবে। পরে যখন ৮০সি-র অধীনে আবেদন করবেন, এই করছাড় প্রযোজ্য হবে।
অসুবিধা
১. বাজার সংক্রান্ত ঝুঁকি রয়েছে। ELSS-এ শেয়ার বাজার, ইক্যুইটিতে বিনিয়োগ করা হয়। বিশেষজ্ঞ দ্বারা সেই বিনিয়োগের পোর্টফোলিও সাজানো হয়। তা সত্ত্বেও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে শেয়ার বাজার নিম্নমুখী হলে, তার প্রভাব পড়তে পারে রিটার্নে।
২. বিনিয়োগ দীর্ঘমেয়াদী। কমপক্ষে ৫ বছর থেকে ৭ বছরের জন্য বিনিয়োগ করে থাকতে হবে।
৩. বছরে ১,৫০,০০০ টাকার লগ্নি পর্যন্তই করছাড় প্রযোজ্য হবে।
ফলে আপনার বার্ষিক বিনিয়োগের অঙ্ক ১,৫০,০০০ টাকার কম হলে, সেক্ষেত্রে ELSS-এর বিষয়ে ভেবে দেখতে পারেন। কিছুটা ঝুঁকি থাকলেও, এই বিনিয়োগেই তুলনামূলকভাবে বেশি রিটার্ন পাবেন। ফলে যাঁরা সরাসরি শেয়ার বাজারে টাকা রাখতে ভয় পান, তাঁদের জন্য এটি সেরা অপশন হতে পারে।
আরও জানতে ফোন করুন এই নম্বরে +91 9051052222 বা ইমেল করুন [email protected] এ।
– প্রবাল রায়