আজ আমরা এমটিএফ নিয়ে কথা বলবো। প্রথমেই জানা যাক এমটিএফ-এর অর্থ কী? এমটিএফ অর্থাৎ মার্জিন ট্রেড ফান্ডিং।
এমটিএফ – এটি এমন একটি সুবিধা যা আপনার ব্রোকারের কাছ থেকে আপনি পেতে পারেন। এই সুবিধার মাধ্যমে আপনি যে পরিমাণ শেয়ার কিনতে চান, এবং তার জন্য আপনাকে মোট যে মূল্য দিতে হয় সেই মোট মূল্যের একটা পার্সেন্টেজ(%) দিয়ে আপনি শেয়ারগুলোর মালিক হতে পারেন।
একটা উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করা যাক। ধরা যাক – আপনি কোনো কোম্পানির ১০০ টা শেয়ার কিনতে চান। যার প্রত্যেক শেয়ারের বাজার দাম ২৫০০ টাকা, এবং মার্জিন ২০%। তাহলে ১০০ টা শেয়ার কিনতে মোট দাম পড়বে ২৫০০০০ টাকা। কিন্তু মার্জিন ট্রেডিং-এর সুবিধা থাকার জন্য আপনাকে কেবল মাত্র ৫০০০০ টাকার মূল্যের শেয়ার(হেয়ার-কাট করার পর) জমা করতে হবে। বাকি ২০০০০০ টাকা আপনার ব্রোকার আপনাকে ধার হিসাবে দেবেন।এই ২০০০০০ টাকার ওপর ব্রোকার আপনার কাছ থেকে পূর্বনির্ধারিত হারে সূদ নেবেন, যা বিভিন্ন ব্রোকার-এর ক্ষেত্রে বিভিন্ন হয়ে থাকে।
এখানে একটা কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য যে, মার্জিন রাখার সময়ে সেই সমস্ত শেয়ার-কেই ধরা হবে, যে গুলো মার্জিনের জন্য স্বীকৃত।
হেয়ার কাট– শেয়ার মার্কেট সবসময় অনিশ্চিত। প্রতিনিয়ত তার দাম ওঠানামা করে। ধরা যাক আপনি যে শেয়ার ব্রোকারের কাছে মার্জিন হিসাবে রাখছেন তার আজকের বাজার মূল্য ১০০০০০ টাকা। ব্রোকার বর্তমান বাজার দরের উপর নির্ভর করে আপনাকে এমটিএফ-এর সুবিধা দিলেন। এবার কোনো একটা কারণে যদি শেয়ারগুলোর মূল্য বিশালভাবে পড়ে যায় তাহলে আপনার ব্রোকারকে বিশাল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে, আবার যদি আপনি যে শেয়ারগুলো কিনেছেন তার পুরো দাম সময়মতো মেটাতে সক্ষম না হন, তাহলেও। তাই যে শেয়ার আপনি মার্জিনের জন্য জমা করেন সেই শেয়ারের দাম বাজারে দাম এর থেকে কম ধরা হয়। শতকরা কতটা হবে সেটা নির্ভর করে সেই শেয়ারের বাজার গত ঝুঁকি কতটা সেটা বিবেচনা করে। এই শতকরা হার বিভিন্ন শেয়ারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন হবে।
আপনি মার্জিন ট্রেডিং- এর সুবিধা দু-ভাবে নিতে পারেন ।
১) ইনট্রাডে – এটা হলো সবচেয়ে সাধারণ উপায় যেখানে আপনি এমটিএফ-এর সাহায্যে শেয়ার কেনা-বেচা করতে পারেন। ব্রোকার আপনাকে আপনার জমা করা শেয়ার এর ওপর নির্দিষ্ট পরিমাণ অবধি এমটিএফ এর সুবিধা দিয়ে থাকেন। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে যে এই সুবিধা কেবল মাত্র এক দিনের জন্যই, বিশেষত আপনি যদি এমন কোনো শেয়ার বিক্রি করেন যা-কিনা আপনার ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট-এ নেই।
২) ডেলিভারি – এখানে আপনি কিন্তু একদিনের জন্য নয়, আপনার ব্রোকার-এর সঙ্গে পূর্ব-নির্ধারিত বোঝাপড়া অনুযায়ী(T+N) সময়ের জন্য বিনিয়োগ করতে পারেন। এক্ষেত্রে এই সুবিধার জন্য আপনার ব্রোকারকে নির্ধারিত সূদ দিতে হয়। যেদিন আপনি শেয়ার কিনলেন, সেই দিন থেকেই এই সূদ-এর হিসাব শুরু করা হয়।
ডেলিভারি ট্রেডের ক্ষেত্রে আরো একটা বিষয় জেনে রাখা দরকার, আপনাকে সব সময় একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ মার্জিন ব্যালান্স বজায় রাখতে হবে। আপনি যদি ওই মিনিমাম মার্জিন ব্যালান্স বজায় না রাখেন তখন মার্জিন কল করা হবে। সেক্ষেত্রে আপনাকে মিনিমাম মার্জিন ব্যালান্স বজায় রাখার জন্য নতুন করে কোনো শেয়ার আপনাকে জমা করতেই হবে।
সুবিধা
- আপনি সামান্য কাগজপত্র সই করেই, এই সুবিধা গুলি ব্যবহার করতে পারেন।
- আপনি আপনার কেনার ক্ষমতা বাড়াতে পারেন, কারণ ব্রোকার আপনাকে আপনার জমা দেওয়া শেয়ার-এর ওপর নির্দিষ্ট পরিমাণে অতিরিক্ত কেনার ক্ষমতা দেন।
- ন্যূনতম বিনিয়োগ করে আপনি আপনার লাভ এর শতকরা পরিমাণ বাড়াতে পারেন। আগের উদাহরণে বলা হয়েছে যে, আপনি ৫০০০০ টাকার দামের শেয়ার-এর বিনিময়ে(১০০* ২৫০০)=২৫০০০০ টাকার শেয়ার কিনতে পারেন। এখন দেখা গেল যে ১০০ টাকা করে আপনার শেয়ার -এর দাম বেড়ে গেল, অর্থাৎ আপনার লাভের ক্ষেত্রে ১০০টা শেয়ার-এর ওপর যে লাভ হবে, (১০০*১০০)=১০০০০ টাকা সেটাই আপনার লাভ। এখানে আপনার লাভের শতকরা হিসাব(১০০০০/৫০০০০)=২০%।
- ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট এ থাকা আপনার শেয়ার- কে মার্জিন হিসাবে কাজে লাগাতে পারেন। আগে যা কেবলমাত্র নগদ দিয়ে করা যেত।
- মার্জিন হিসাবে জমা রাখা শেয়ার-এর থেকে পাওয়া ডিভিডেন্ড, বোনাস সবকিছু শেয়ার হোল্ডারই পাবেন।
- এছাড়াও ফিউচার এন্ড অপশন-এ ভোলাটিলিটি ক্যাশ মার্কেট-এর থেকে বেশি। ফিউচার এন্ড অপসন-এ কেনা-বেচা করার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ (লট-সাইজ) আছে কিন্তু ক্যাশ মার্কেটে সেইরকম কিছু না থাকার জন্য আপনি আপনার ইচ্ছা মতো শেয়ার কিনতে পারেন।
এই সুবিধা গুলোর সঙ্গে কিছু অসুবিধাও আছে যেমন, আপনার লাভের পরিমাণ যেরকম বাড়বে, সেইরকম ক্ষতির পরিমাণও বাড়তে পারে। তাই আপনি যখন এমটিএফ-এ ট্রেডিং করবেন, তখন মিনিমাম মার্জিন ব্যালান্স, স্টপ-লস – এই বিষয়গুলোর কথা মনে রাখবেন, এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন।
আপনাদের আরও কিছু জানার থাকলে নির্দ্বিধায় নিচের কমেন্ট সেকশনে কমেন্ট করুন অথবা আমাদের কল করুন +91 9051052222 নম্বরে।
– কৃষ্ণেন্দু পাত্র