ক্রিকেট বিশ্বের বিখ্যাত খেলোয়াড়রা প্রায় প্রত্যেকেই একটি ‘ব্র্যান্ড’-এর সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের জার্সি ও ব্যাটে উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে – ‘এমআরএফ’। সারা বিশ্বের আর কোনো ব্র্যান্ডের সঙ্গে এতজন বিখ্যাত খেলোয়াড়ের নাম জুড়ে নেই বা আর কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে এতজন বিখ্যাত খেলোয়াড়কে একসূত্রে বাঁধতে পারেনি।
‘এমআরএফ’ – আদি নাম যার ‘মাদ্রাজ রবার ফ্যাক্টরি’, ১৯৪৬ সালে কে এম মাম্মেন মাপ্পিলাই মাত্র ১৪০০০/- টাকা পুঁজি করে খেলনা বেলুন দিয়ে এই প্রতিষ্ঠানের পত্তন করেছিলেন মাদ্রাজের কাছে তিরুভত্তিযুরে। মাত্র চার বছরের মধ্যেই সংস্থাটি ল্যাটেক্স কাস্ট খেলনা, গ্লাভস ও গর্ভনিরোধক ব্যবসার প্রসার করে এবং ১৯৫২ সালে সম্পূর্ণরূপে রবার উৎপাদনকারী সংস্থায় পরিণত হয়। পরবর্তীতে রবার টায়ার তৈরীতে অন্যতম প্রধান হয়ে ওঠে।
১৯৬০ সালে ‘মাদ্রাজ রবার ফ্যাক্টরি’ একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে নথিভুক্ত হয় এবং রবার টায়ার তৈরির কারিগরিতে ওহিও, আমেরিকার ‘ম্যান্সফিল্ড টায়ার এন্ড রবার’ কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপন করে।
তদানীন্তন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী কে কামরাজ তিরুভত্তিযুরে এমআরএফ এর টায়ার তৈরির কারখানার উদ্বোধন করেন। ১ এপ্রিল, ১৯৬১ এমআরএফ লিমিটেড পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে নথিভুক্ত হয়।
১৯৪৬ সালে এমআরএফ বেইরুটে নিজের প্রথম বৈদেশিক কার্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে রপ্তানি শুরু করে। ১৯৬৭ সাল থেকে মার্কিন দেশে তার রপ্তানি শুরু হয়।
১৯৪৬ সালে ‘এমআরএফ মাসলম্যান’ তৈরি হয়। ১৯৭০-এ কোট্টায়াম, ১৯৭১-এ গোয়া, ১৯৭২-এ আরাকোনাম, ১৯৮৯-এ মেডাক এ কারখানা স্থাপন করে।
১৯৯৬-এ এমআরএফ তার রৌপ্য জয়ন্তীতে পন্ডিচেরিতে রেডিয়াল টায়ার এবং ২০১১ ও ২০১২তে ত্রিচিতে যথাক্রমে কনভেনশনাল টায়ার এবং রেডিয়াল টায়ারের কারখানা স্থাপন করে।
১৯৮৯ সালে বিশ্বের বৃহত্তম রবারের খেলনা প্রস্তুতকারী সংস্থা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘হাসব্রো ইন্টারন্যাশনাল’-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ এমআরএফ ‘ফানস্কুল’ ব্র্যান্ড তৈরি করে।
খেলার প্রতি অবদান প্রসঙ্গে ভারতবর্ষ তথা বিশ্বের অন্যান্য বাণিজ্যিক সংস্থার সঙ্গে তুলনা করলে এমআরএফ এখনও অন্যতম।
১৯৮৮ সালে ‘এমআরএফ পেস ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ক্রিকেট ফাস্ট বোলার তৈরির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনা এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছে। প্রখ্যাত অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি বোলার ডেনিস লিলি এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রশিক্ষকের ভার নেন এবং তার হাত ধরে একাধিক ফাস্ট বোলার জন্ম নিয়েছে, পরবর্তীকালে যাঁরা বিপক্ষ দলের ব্যাটসম্যানদের ত্রাসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। উল্লেখ করা যেতে পারে এদেশে জাভাগাল শ্রীনাথ, ইরফান পাঠান, মুনাফ প্যাটেল, ভেঙ্কটেশ প্রসাদ, আর পি সিং ও জাহির খান এবং বিদেশী খেলোয়াড় চামিন্ডা ব্যাস, গ্লেন ম্যাকগ্রাথ, মিশেল জনসন এবং ব্রেট লি এর মত বিখ্যাত পেসারের নাম, যাঁরা এমআরএফ পেস ফাউন্ডেশন-এ প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। গ্লেন ম্যাকগ্রাথ বর্তমানে এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধিকর্তা।
এছাড়া ১৯৮৯ সালে এমআরএফ মুখ্য আয়োজক ছিল ‘জওহরলাল নেহেরু ট্রফি’র।
শুধু ক্রিকেটই নয়, ১৯৯০ সালে এমআরএফ এনেছিল ষষ্ঠ ওয়ার্ল্ড কাপ বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপ, যা মুম্বইয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
কার রেসিং এ এমআরএফ প্রথম ফর্মুলা কারস তৈরী করেছিল ১৯৯৭-এ। এছাড়া আয়োজকের ভূমিকায় ছিল ‘এমআরএফ চ্যালেঞ্জ ফর্মুলা ২০০০ ওপেন – হুইল মোটর স্পোর্টস’-এর, যা সংগঠিত হয়েছিল চেন্নাই, বাহরিন, দোহা এবং নয়ডাতে।
শুধু আয়োজকের ভূমিকায় নয়, কার রেসিং চালক তৈরির প্রয়াসেও এই সংস্থা অগ্রগণ্য – নারায়ণ কার্তিকেয়ন, করন চান্দক, অশ্বিন সুন্দর, এন লীলাকৃষ্ণান এবং রাজ্ ভরত এই প্রয়াসেরই ফল।
এম আর এফ ৱ্যালি টিম, ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ৱ্যালি চ্যাম্পিয়নশিপ ছাড়াও আরো কিছু ৱ্যালিতে জয় লাভ করেছে। এমআরএফ অংশগ্রহণ করেছে ‘রেইড ডে হিমালয়া’ প্রতিযোগিতায়। টু হুইলার রেসিং এও এমআরএফ-এর অবদান অনস্বীকার্য।
এমআরএফ কার্টিং এর আয়োজকের ভূমিকাতেও অগ্রগণ্য। এমআরএফ-ই প্রথম ভারতীয় টায়ার কোম্পানি যারা ‘এফআইএ’ অনুমোদিত কার্টিং টায়ার উৎপাদনকারী।
ফুটবল জগতেও এমআরএফ এর অবদান উল্লেখযোগ্য। সংস্থাটি প্রিমিয়ার লীগ খ্যাত ফুটবল ক্লাব ‘নিউ ক্যাসল ইউনাইটেড’, ‘ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেড’ এর অন্যতম স্পনসরার। এছাড়া অফিসিয়াল টায়ার পার্টনার ‘ওয়েস্ট ব্রমউইচ আলবিয়ন’-এর।
এমআরএফ এর প্রতিষ্ঠার দিন থেকে আজ পর্যন্ত তার অভূতপূর্ব ব্যবসায়িক সাফল্য ও প্রতিটি ক্ষেত্রে তার অবদান ও সহযোগিতায় আপামর ভারতবাসী তথা বিশ্ববাসীর কাছে তার স্থান সমৃদ্ধ করেছে। তাই ১০ টাকা ফেস ভ্যালুর এমআরএফ এর শেয়ার আজ ৭৭,০০০ টাকায় পৌঁছেছে, যা ভারতের শেয়ার বাজারে সর্বাধিক মূল্যবান।
আরও জানতে ফোন করুন এই নম্বরে +91 9051052222 বা ইমেল করুন [email protected]
– মেলভিন পিনটো (অনুলিখন : অনিন্দিতা চক্রবর্তী)