ইটিএফ — শেয়ারে লগ্নির সহজ উপায়
শেয়ারে লগ্নি মানেই যে নিয়মিত খাতা কলম নিয়ে অঙ্ক কষে সংস্থার আর্থিক অবস্থা, কর্তৃপক্ষের কৌলীন্য প্রভৃতি বিচার করে তবেই বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তেমনটা মোটেই নয়।
বরং, এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড বা ইটিএফ-এর সৌজন্যে প্রতিটি সংস্থার ঠিকুজি-কুষ্ঠি, রাহু, গণ বিচার করে বিনিয়োগ করার দিন এখন অতীত।
আর, এই ইটিএফের এমনই মাহাত্ম্য যে শেয়ার বাজারে পেশাদার বিনিয়োগকারীই হন বা হাতেখড়ি দিতে আসা শিক্ষানবীশ, সকলের বিনিয়োগ পোর্টফোলিওতে একটি-দু’টি ইটিএফ থাকা উচিত। এখানে উল্লেখ করতেই হয়, এ দেশের শেয়ার বাজারে যত বিদেশি বিনিয়োগ আসে তার সিংহভাগই ওই ইটিএফের মাধ্যমে। আমাদের তুলনায় প্রায় আটগুণ বড় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে দৈনিক যে পরিমাণ কেনাবেচা হয় তার ৬০% ইটিএফ!
এতোই যার মাহাত্ম্য, সেই ইটিএফ আদতে কী?
ইটিএফের পরিচয় তার নামেই। এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড। অর্থাৎ, একগুচ্ছ সংস্থার শেয়ার নিয়ে তৈরি একটি ফান্ড যার ইউনিট শেয়ার বাজারে প্রতিদিন কেনাবেচা করা যায় আর পাঁচটা সংস্থার শেয়ারের মতো।
আমাদের আখ্যানের শুরু এইখান থেকে। যে কোনও ইটিএফ নয়। শেয়ার বাজারে হাতেখড়ি দিতে লগ্নি করুন মুম্বই শেয়ার বাজারের দুই প্রধান সূচক, সেনসেক্স বা নিফটি, যে কোনও একটি ইটিএফে। প্রায় প্রত্যেক মিউচুয়াল ফান্ড হাউসের এই সূচক ইটিএফ রয়েছে।
কোনও সূচকের আদলে তৈরি ইটিএফে বিনিয়োগের প্রধান সুবিধা হল এই যে ওই সূচক যে রকমভাবে বাড়বে-কমবে, আপনার ইটিএফও সেই অনুসারে রিটার্ন দেবে।
অর্থাৎ, কোনও সূচকের ইটিএফ সেই সূচক গঠনকারী সংস্থাগুলির সম্মিলিত রিটার্নকে ছায়ার মতো অনুসরণ করে, কোনও একটি বা দু’টি সংস্থার শেয়ার দরকে নয়।
যেহেতু সেনসেক্স বা নিফটি বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্রের সবচেয়ে বড় ও প্রতিষ্ঠিত সংস্থাগুলির শেয়ার দিয়ে তৈরি, তাই ডাইভারসিফিকেশন বা বিবিধকরণ (শেয়ারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ) এবং লো-রিস্ক হল সেনসেক্স বা নিফটি ইটিএফের বুনিয়াদী সুবিধা।
ইটিএফের আর একটি সুবিধা হল, এটি একটি প্যাসিভ বা নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগ পদ্ধতি বলে এর এক্সপেন্স রেশিও বা ফান্ড ম্যানেজমেন্ট চার্জ খুব কম।
এ বার আসা যাক আসল কথায়। ইটিএফ লগ্নিতে রিটার্ন কী রকম পাওয়া যায়? গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন মিউচুয়াল ফান্ডের সেনসেক্স ইটিএফ বার্ষিক কত চক্রবৃদ্ধি হারে রিটার্ন দিয়েছে তা নীচের টেবিলে দেওয়া হল। এখান থেকে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে লগ্নি দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। প্রতি বছর ১৪.৮৭% চক্রবৃদ্ধি হারে রিটার্ন পেলে পাঁচ বছরে লগ্নি দ্বিগুণ হয়। এখানে তার থেকে বেশি রিটার্ন মিলেছে।
টাকার কল
সুচক ইটিএফ | ৫ বছরের রিটার্ন (বার্ষিক চক্রবৃদ্ধি হারে) |
এইচডিএফসি সেনসেক্স ইটিএফ | ১৫.৫৬% |
এসবিআই — ইটিএফ সেনসেক্স | ১৫.৪৬% |
কোটাক সেনসেক্স ইটিএফ | ১৫.২২% |
আইসিআইসিআই প্রুডেন্সিয়াল সেনসেক্স ইটিএফ | ১৫.৩৪% |
ইউটিআই সেনসেক্স ইটিএফ | ১৫.৪৯% |
এতো রিটার্ন নিশ্চয় কোনও ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিস আমানতে পাবেন না।
করের বিচারেও ব্যাঙ্ক/পোস্ট অফিসের আমানতের থেকে ইটিএফ অনেক বেশি সুবিধাজনক। উল্লেখ্য, বাজারে অনেক ধরনের ইটিএফ রয়েছে। এদের মধ্যে কিছু আছে ইকুইটি বা শেয়ার নির্ভর ইটিএফ, কিছু আছে ডেট বা ঋণপত্র নির্ভর ইটিএফ, কিছু আছে গোল্ড ইটিএফ, আবার কিছু আছে ইন্টারন্যাশনাল ইটিএফ। কোন ইটিএফে কত ট্যাক্স দিতে হয় তার খতিয়ান নীচের টেবিলে দেওয়া হল।
কর সুবিধা
১২ মাসের কম | ১২-৩৬ মাস | ৩৬ মাসের বেশি | |
ইকুইটি ইটিএফ* | ১৫% | ১০% | ১০% |
ডেট ইটিএফ | লগ্নিকারীর প্রান্তিক আয়করের হার | লগ্নিকারীর প্রান্তিক আয়করের হার | ২০% ইন্ডেক্সেশনের সুবিধা সহ |
গোল্ড ইটিএফ | লগ্নিকারীর প্রান্তিক আয়করের হার | লগ্নিকারীর প্রান্তিক আয়করের হার | ২০% ইন্ডেক্সেশনের সুবিধা সহ |
ইন্টারন্যাশনাল ইটিএফ | লগ্নিকারীর প্রান্তিক আয়করের হার | লগ্নিকারীর প্রান্তিক আয়করের হার | ২০% ইন্ডেক্সেশনের সুবিধা সহ |
সেনসেক্স বা নিফটি ইটিএফ পড়ে ইকুইটি ইটিএফ শ্রেণিতে। ফলে, ব্যাঙ্ক আমানতের চেয়ে সেনসেক্স বা নিফটি ইটিএফ-এ কর সুবিধা অনেক বেশি।
আরও জানতে ফোন করুন এই নম্বরে +91 9051052222 বা ইমেল করুন [email protected] এ।
– পরিচয় গুপ্ত