যাঁদের বয়স কম, বা যাঁরা সরাসরি চাকুরিজীবি নন, কোনও পেশায় আছেন বা ব্যবসা করেন, তাঁদের কাছে ‘রিটায়ারমেন্ট প্ল্যানিং’ ব্যাপারটা বিশেষ গুরুত্ব পায় না! যদিও চাকুরিজীবিদের প্রথম থেকে বাধ্যতামূলকভাবে অবসরের লক্ষ্যে কিছু অর্থ জমাতে হয় – প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেমের মাধ্যমে।
আমরা সবাই জানি, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আমরা কাজ করে চলতে পারব না, অবসর চরম সত্যগুলোর একটা। তবু, বিষয়টিকে অনেকক্ষেত্রেই আমরা এড়িয়ে চলি, অন্তত ততদিন, যতদিন না অবসর এসে দরজায় কড়া নাড়ছে! অন্যান্য লক্ষ্য – যেমন, নতুন বাড়ি কেনা, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা কিংবা বিয়ের খরচ সম্পর্কে পরিকল্পনা থাকলেও জীবনের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং সময় সম্পর্কে সব সময়ই পাশ কাটিয়ে যাই ।
রিটায়ারমেন্ট কেন চ্যালেঞ্জিং?
প্রথমত, আধুনিক প্রগতিশীল সমাজ ব্যবস্থায় নিউক্লিয়ার ফ্যমিলির ধারা চালু হবার পর থেকে পারিবারিক সাপোর্ট সিস্টেম অদৃশ্যপ্রায়। নিজের সংসারের দায়িত্ব নেওয়ার মত রোজগেরে ভাইদের পাশে পাওয়া যায় না, পরের প্রজন্ম চাইলেও বহুক্ষেত্রে অন্যান্য শহরে নিজস্ব সংসার সামলে বাবা-মার সংসারের পুরো দায়িত্ব নিতে পারেন না। বাবা-মাও চান না নির্ভর করতে। বরং ছেলেমেয়ে নিজের শিক্ষাঋণের শেষাংশ নিজে মেটাতে পারলেই বহুক্ষেত্রে বাবা-মা খুশি হন!
দ্বিতীয়ত, মুদ্রাস্ফীতির কারণে টাকার দাম কমতে থাকে। আজ সংসারখরচ যদি মাসে তিরিশ হাজার, তা এক দশক বাদে গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় পঞ্চাশ হাজারে। পেনশন এতটা বাড়ে না, বা সরকারি স্কিম থেকে মাসে মাসে পাওয়া টাকা একেবারেই বাড়ে না।
তৃতীয়ত, অবসরের আগে আমরা এক ধরনের জীবন-যাপনে অভ্যস্ত থাকি ,অবসরের পর হঠাৎ এই জীবনযাপনের মান বদলে ফেলা খুব কষ্টকর ।
চতুর্থত, জীবন-যাপনের মান ক্রমশ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জীবনকাল অনেকটাই বেড়ে গেছে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির কারণে। ফলস্বরূপ, অবসরকালীন জীবনও আমাদের কাছে অনেক লম্বা। যত অবসরজীবন প্রলম্বিত হবে, তত চিকিৎসার খরচও বেড়ে যাবে মুদ্রাস্ফীতির কারণে এবং নতুন প্রযুক্তির খরচের জন্য।
জীবনের এই একটা সময়, যা আমরা সবাই নতুন করে শুরু করি, পেশায় যে যাই হই না কেন – চাকুরীজীবী, ব্যবসায়ী বা সেলফ-এমপ্লয়েড! প্রথম জনের অবসর সময়নির্দিষ্ট হলেও পরের দুজনের ক্ষেত্রে তা অনেকটা নিজেদের ওপর নির্ভর করে। যাঁরা অবসরের সঠিক সময় আগে থেকে বলতে পারবেন না, তাঁদের ক্ষেত্রে রিটায়ারমেন্ট প্ল্যানিং আরও একটু বেশি চ্যালেঞ্জিং। নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে জমানো ফান্ড না থাকলে স্বাচ্ছল্য যতই থাক, দিশাহীন ভাবে পথ চলা মুশকিল হয়।
অবসরকালীন জীবনে অনেক স্বপ্নও থাকে। যা ব্যস্ত জীবনে পাওয়া হয় নি, তার এই তো সময়! যেমন –
- বিশ্বভ্রমণ
- সংসারের এবং চাকরির চাপে যে স্বপ্ন ঢাকা পড়েছিল, তার বাস্তবায়ন
- উত্তরাধিকারদের জন্য সম্পদ
- সমাজসেবায় দান
এত কিছু করার থাকে ,অথচ আয় কেবলমাত্র পেনশনে এসে ঠেকে! কিংবা অন্যান্যদের নিজের জমানো পুঁজির ওপর নিভর করতে হয় ।
কর্ম-জীবনে আমরা যা উপার্জন করে থাকি, তা থেকে যা সঞ্চয়যোগ্য, তা দিয়ে সাধারণত আমরা ব্যাঙ্কে ফিক্সড ডিপোজিট করি, আর আয় বাড়লে করের হাত থেকে রেহাই পেতে পিপিএফ করে থাকি। আর রিটায়ারমেণ্ট-এর জন্য জমানোর কথা বললে আমাদের ইপিএফ, গ্র্যাচুইটি অথবা পেনশনের কথা মাথায় থাকে।
কিন্তু আসল কথা হল – এই ফান্ড যথেষ্ট কিনা! তা দিয়ে যেভাবে চলার কথা, সেভাবে চলবে কিনা, আর চললেও কত দিন চলবে? সেই সব নিয়ে আমরা ভাবি না,আর ভাবলেও কোন সমাধান করে উঠতে পারি না সঠিক পরামর্শের অভাবে।
যা সব থেকে বেশি সমস্যা তৈরি করে তা হল মুদ্রা-স্ফীতি। আমাদের সমস্ত হিসাবকে এদিক-ওদিক করে দেয় মুদ্রাস্ফীতি, জমানো পুঁজির ক্রয়ক্ষমতাকে কমিয়ে দিয়ে। জমানো পুঁজি দিয়ে কত দিন একই ভাবে চালানো যাবে, তাতেও প্রশ্ন থেকে যায়। সেজন্য মুদ্রাস্ফীতিকে ঠিকঠাক হিসাবে ধরে খরচের অঙ্ক কষে রিটায়ারমেন্ট ফান্ড নির্ধারণ করার প্রয়োজন হয় অনেক আগে থেকে।
সকলেরই একটা শান্তিপূর্ণ অবসরকালীন জীবনযাত্রার প্রয়োজন আছে। জীবনের এই সময়ে সঠিক পরিকল্পনার অভাবে যদি পর্যাপ্ত সঞ্চয় না থাকে ,তাহলে এই সময়ে অনেক কিছু ত্যাগ করতে হয় বা পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলতে হয়। সেটা কখনই কাম্য নয় । তাই জীবনসায়াহ্ণে এসে এমন অসহনীয় পরিস্থিতির মুখে যাতে পড়তে না হয়, সেজন্য আগে থেকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে এগোন। ভবিষ্যতের কাঙ্ক্ষিত জীবন-যাপনের জন্য বর্তমানের সঞ্চয়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করুন ।
আরও বিশদে জানতে ক্লিক করুন
আরও জানতে ফোন করুন এই নম্বরে +91 9051052222 বা ইমেল করুন [email protected] এ।
– কৃষ্ণেন্দু পাত্র