বিনিয়োগ সংস্কৃতির বাংলার বুকে ঢেউ তোলা শুরু নব্বই দশকের মাঝামাঝি। এবং তা জাঁকিয়ে বসে চলতি সহস্রাব্দের শুরুতে। তার আগে পর্যন্ত বাঙালির উদ্বৃত্ত অর্থের গন্তব্য হত পোস্ট অফিস কিংবা ব্যাঙ্কের ফিক্সড ডিপোজিট স্কিম। তাতে যতটা টাকা বাড়ে, তাতেই সকলে তুষ্ট হতেন। গত শতকের বাবারা মেয়ের বিয়ের কথা ভেবে কিষাণ বিকাশ পত্র কিংবা পিপিএফ করেছেন, কিন্তু এসআইপি করেছেন কি কেউ? এবার ভ্রূ কুঁচকে প্রশ্ন করতেই পারেন – আরে! এসআইপি! সে তো এই সেদিনের কথা! সেই যুগে এসআইপি কোথায়! সত্য কথা, কিন্তু এরও উত্তর আছে। সেজন্য একটু ধৈর্য ধরতে হবে।
সহজ কথা হচ্ছে, একটা সময়ে টাকা জমানোর ‘সুয়োরাণী’ ছিল ফিক্সড রিটার্ন ইন্সট্রুমেন্ট, যা ঋণপত্রে বিনিয়োগ করে নির্দিষ্ট হারে সুদ দেয়। উল্টোদিকে, দুয়োরাণী শেয়ারবাজার, যেখানে রিটার্ন পাওয়া যাবে, না ঘরের টাকাটাই উবে যাবে, সেটাই কেউ ঠিকঠাক জানতেন না! সেজন্য শেয়ারবাজারের ধারকাছ মাড়াতে কেউ বড় একটা সাহস করতেন না। কিন্তু একটা সময়ে দুনিয়ার সঙ্গে তাল রেখে সুদের হার কমতে শুরু করল। যাতে আগে ১২% সুদ পাওয়া যেত, তা দিতে শুরু করল ৮%। ১৪-১৫% সুদে পাঁচ বা সাড়ে পাঁচ বছরে টাকা দ্বিগুণ হওয়ার সোজা রাস্তাটা বদলাল।
আসল কথা হল, ঝুঁকি। ঋণপত্রে ঝুঁকি কম, তাই রিটার্ন কম হওয়ার কথা। যে বিনিয়োগে ঝুঁকি আছে, তা রিটার্নও বেশি দেবে। সেজন্যই ঝুঁকির ভারসাম্য আনতে হবে, তৈরি করতে হবে ব্যালান্সড পোর্টফলিও। সেজন্য বিস্তর পড়াশোনা ও তথ্য ঘাঁটাঘাঁটির প্রয়োজন। কজন সে পথে হাঁটতে রাজি হবেন? এই জায়গাতেই প্রবেশ মিউচুয়াল ফান্ড-এর।
মিউচুয়াল ফান্ড-এ বিনিয়োগে কি ঝুঁকি নেই? আছে, অবশ্যই আছে। বিজ্ঞাপনে বার বার সেকথা বলা হয়, সবাই শুনেছেন। মিউচুয়াল ফান্ড কীসে বিনিয়োগ করে? – শেয়ারে, ঋণপত্রে, আসলে দুইয়েই। এছাড়াও আছে অন্য ধরনের ফান্ড, যেমন লিক্যুইড ফান্ড, যার বিনিয়োগ টাকার বাজারে, এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড, যা সোনা, ইনডেক্স ইত্যাদি যেকোনো ইন্সট্রুমেন্ট-এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি হতে পারে।
তাহলে তফাৎ কোথায়?
মূল পার্থক্য হচ্ছে – মিউচুয়াল ফান্ড-এ ফান্ড ম্যানেজাররা পড়াশোনা, তথ্য ঘাঁটাঘাঁটি এবং ঝাড়াইবাছাই এর কাজটা করে দিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, নির্ভরযোগ্যভাবে সর্বক্ষণ তা পর্যবেক্ষণ করে চলেছেন। প্রয়োজনে কেনাবেচাও করছেন।
এই বাছাই, পর্যবেক্ষণ ও কেনাবেচা তাঁরা কেবল একজন বিনিয়োগকারীর জন্য করছেন না। একটি ফান্ড-এর জন্য করছেন। তাঁদের খরচ ভাগ হয়ে যাচ্ছে ওই ফান্ড-এর সব বিনিয়োগকারীর মধ্যে, তাঁদের বিনিয়োগের অনুপাতে।
মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনার খরচ, যাকে পরিভাষায় ‘এক্সপেন্স রেশিও’ বলে, তা হল ওই ফান্ডের অধীন সর্বমোট সম্পদের পরিমাণ অর্থাৎ ‘অ্যাসেট আন্ডার ম্যানেজমেন্ট’ বা এইউএম-এর সর্বাধিক ২.৫%, ইক্যুইটি ফান্ড-এর ক্ষেত্রে। ডেট ফান্ড-এর ক্ষেত্রে তা ০.২৫% কম। ফান্ড-এর পরিমাপ যত বড় বা এইউএম যত বেশি, এক্সপেন্স রেশিও তত কম।
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, ইক্যুইটি শেয়ারে অনুমোদিত সর্বাধিক ব্রোকারেজও ২.৫%। আসলে বাজারে চলে দু ধরনের ব্রোকারেজ – অ্যাডভাইজরি ব্রোকারেজ ও ডিসকাউন্ট ব্রোকারেজ। ডিসকাউন্ট ব্রোকারেজ-এ আবার নানা ধরনের অঙ্ক চলে। ফান্ড ম্যানেজার এর কাজটা অ্যাডভাইজরি ব্রোকারেজ-এর মাধ্যমে হওয়ার কথা। সেজন্যই সেবি ২.৫% ব্রোকারেজের সর্বাধিক হার কমায় নি, যদিও বাজারে ডিসকাউন্ট ব্রোকারেজ কোথাও কোথাও শূন্যে গিয়ে ঠেকেছে।
এত কথার কারণ একটাই। মিউচুয়াল ফান্ড এর মাধ্যমে যেভাবে বিনিয়োগ হয়, তা সরাসরিও করা সম্ভব। এবার তাহলে আসি – কখন মিউচুয়াল ফান্ড আর কখনই বা সরাসরি বিনিয়োগ। ফান্ড ম্যানেজার যা করে দেন, তা কি সাধারণ মানুষ নিজের ব্যবস্থায় করতে পারেন? পারলে কীভাবে? সেজন্য প্রথমে দেখে নেওয়া যাক, মিউচুয়াল ফান্ড কীভাবে তৈরি করা হয়।
মিউচুয়াল ফান্ডের গঠনভেদ
মিউচুয়াল ফান্ড গঠনশৈলীর দিক মূলত চাররকম –
১) ইক্যুইটি ফান্ড – যাতে ৬০% ইক্যুইটি শেয়ার থাকতেই হবে। তার বেশি থাকতে পারে, কিন্তু কম নয়। ফান্ড ম্যানেজার ঝুঁকিতে ভারসাম্য এনে ফান্ডটির নেট অ্যাসেট ভ্যালু বা এনএভি বজায় রাখার জন্য ফান্ডটিতে প্রয়োজনমত ঋণপত্রেও বিনিয়োগ করে থাকেন, যাতে ঝুঁকি তুলনায় অনেক কম।
২) ডেট ফান্ড – ইক্যুইটি শেয়ারে বিনিয়োগ এইউএম-এর ৬০%-এর নীচে নামলেই ওই ফান্ড হয়ে যাবে ‘ডেট ফান্ড’। তাতে বিনিয়োগ করে যা লাভ হবে তা আর ইক্যুইটি নয়, ঋণপত্রের আয়কর হারের আওতায় পড়বে।
৩) হাইব্রিড ফান্ড – ইক্যুইটি এবং ঋণপত্রের মিশেলে তৈরি ভারসাম্যযুক্ত ফান্ড। আয়করের দৃষ্টিতে দেখলে হাইব্রিড ফান্ড বলে আলাদা কিছু নেই। সব হাইব্রিড ফান্ডই আসলে হয় ইক্যুইটি, না হয় ডেট ফান্ড।
৪) মানি মার্কেট ফান্ড – এদের কাজ টাকার বাজারে সুদে টাকা খাটানো। এখানেও ঝুঁকি অনুযায়ী ঋণপত্র ও ইক্যুইটির মত দুধরণের ফান্ড আছে – যারা মূলত সরকারি ঋণপত্রে টাকা খাটায় এবং যারা বেসরকারি ঋণপত্রে টাকা খাটায়। মানি মার্কেট ফান্ডের মধ্যে ঝুঁকি সবচেয়ে কম থাকে ‘লিক্যুইড ফান্ড’-এ। তাই একে ‘ক্যাশ ইক্যুইভালেন্ট’ বা নগদের বিকল্প বলে ধরা হয়।
ইক্যুইটি ফান্ড-এর রকমফের
ইক্যুইটি ফান্ড – এর কয়েকটি রকমফের জেনে রাখা যেতে পারে। মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন, অর্থাৎ বাজারদামে মূল্যায়িত মূলধনের তালিকা অনুযায়ী ইক্যুইটি ফান্ড চার রকমঃ
লার্জ ক্যাপ – এরা মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন তালিকার সবচেয়ে বড় ১০০টি সংস্থার শেয়ারে বিনিয়োগ করে থাকে, যাদের ঝুঁকির পরিমাণ ইক্যুইটি বিভাগে সবচেয়ে কম। সেজন্য ফান্ড ম্যানেজাররা নির্দ্বিধায় এতে ৮০% পর্যন্ত ইক্যুইটি শেয়ার রেখে থাকেন। ২০% বিনিয়োগ বড়জোর ঋণপত্রে হয়ে থাকে।
মিড ক্যাপ – এরা মার্কেট ক্যাপ তালিকার উপর থেকে ১০১ থেকে ২৫০তম সংস্থা গুলিতে বিনিয়োগ করে। ঝুঁকিতে ভারসাম্য আনতে এই ধরণের ফান্ডে ৬৫% পর্যন্ত ইক্যুইটি রাখা হয়। বাকি ৩৫% ঋণপত্রে বিনিয়োগ করা হয়।
স্মল ক্যাপ – মার্কেট ক্যাপ তালিকার ২৫০-এর তলায় যারা, তাদেরই ধরা যেতে পারে ‘স্মল ক্যাপ’ সংস্থা বলে। শেয়ারবাজারে এই ধরণের সংস্থার শেয়ার অগণিত। এরা সাধারণত অনেক বেশি ‘ভোলাটাইল’ প্রকৃতির। এদের ঝুঁকির পরিমাণ অনেক বেশি, তাই রিটার্ন দেওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। তবে মনে রাখতে হবে যে সেই রিটার্ন পজিটিভ বা নেগেটিভ – দু ধরনেরই হতে পারে। ফান্ড ম্যানেজাররা এই ধরণের ফান্ড-এ ভারসাম্য আনতে অন্তত ৩৫% ঋণপত্র রেখে থাকেন।
মাল্টি ক্যাপ – এতদিন পর্যন্ত মাল্টি ক্যাপ ফান্ড বলতে ইক্যুইটি ফান্ডের জগাখিচুড়িকে বোঝাত। আরও সঠিক ভাবে বোঝাতে গেলে বলা যেতে পারে, এ ছিল ছোটবেলায় স্কুলের সরস্বতী পুজোর খিচুরিভোগ, যাতে সকলের ইচ্ছেমত আকৃতি, প্রকৃতি এবং পরিমাপের চাল ডাল উৎসর্গ করা চলত। সম্প্রতি শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি জানিয়ে দিয়েছে যে ‘মাল্টি ক্যাপ’ নামটি শুধু সেই ফান্ডেই ব্যবহার করা যাবে, যাতে ২৫% করে লার্জ, মিড এবং স্মল ক্যাপ থাকবে।
আয়করের নিয়ম অনুযায়ী দু ধরণের ভাগ আছে – ১) ইক্যুইটি বনাম ডেট; ২) ট্যাক্স সেভিং বনাম নন-ট্যাক্স সেভিং।
ইক্যুইটি বনাম ডেট – ইক্যুইটি ফান্ড-এ যাঁরা বিনিয়োগ করেছেন, তাঁরা সাধারণ শেয়ারে বিনিয়োগের নিয়মে এক বছর বিনিয়োগের পর দীর্ঘমেয়াদী মূলধনী করের সুবিধা পান। বছরে মূলধনের ওপর ১ লক্ষ টাকার অতিরিক্ত লাভ হলে তার ওপর প্রযোজ্য ‘লং টার্ম ক্যাপিটাল গেন’ ট্যাক্স ১০%। এক বছরের কম সময়ের বিনিয়োগ স্বল্পমেয়াদী মূলধনী কর বা ‘শর্ট টার্ম ক্যাপিটাল গেন’ ট্যাক্স-এর আওতাভুক্ত। ইক্যুইটিতে তা এখন ১৫%।
উল্টোদিকে, ঋণপত্রে তিন বছর বিনিয়োগ রাখলে তবেই দীর্ঘমেয়াদী মূলধনী কর প্রযোজ্য এবং তা ইন্ডেক্সেশনের পর ২০%। তিন বছরের আগে বিনিয়োগ তুলে নিলে তাতে যে রিটার্ন লাভ হবে তা সাধারণ আয়করের আওতায় পড়বে।
ট্যাক্স সেভিং বনাম নন-ট্যাক্স সেভিং– শুধুমাত্র ‘ইক্যুইটি লিঙ্কড সেভিংস স্কিম’ বা ‘ইএলএসএস’-এ ৮০সি ধারা অনুযায়ী আয়কর ছাড়ের সুযোগ আছে। মিউচুয়াল ফান্ডের অন্য সব স্কিম নন ট্যাক্স সেভিং, অর্থাৎ আয়করের আওতাভুক্ত। ইএলএসএস বলাবাহুল্য ইক্যুইটি স্কিম, এটিতে ৮০% ইক্যুইটি থাকে এবং তা কিনলে তিন বছর রাখতেই হয়, মানে ‘লক ইন’ থাকে।
বিনিয়োগের ধরণ অনুযায়ী ইক্যুইটি ফান্ড দুরকম। ১) অ্যাক্টিভ, ২) প্যাসিভ।
অ্যাক্টিভ ফান্ড– এই ক্ষেত্রে ফান্ড ম্যানেজার নিয়মিত ফান্ডটি পর্যবেক্ষণ ও কেনাবেচা করে থাকেন।
প্যাসিভ ফান্ড– এই ক্ষেত্রে ফান্ড ম্যানেজারের শেয়ার বাছাই-এ বিশেষ ভূমিকা নেই। এগুলি ইন্ডেক্স-এর মত তালিকা ধরে শেয়ার কিনে থাকে। যথা – ‘ইনডেক্স ফান্ড’।
তাহলে এখন কী সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে, যে কোন মিউচুয়াল ফান্ড কী প্রয়োজনে কেনা যেতে পারে আর তার পরিবর্তে সরাসরি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা সম্ভব কি না? দেখা যাক।
পর্যবেক্ষণ
১) বিনিয়োগের সম্পূর্ণ অর্থ ইক্যুইটিতে লাগানো উচিত নয়। লার্জ ক্যাপ শেয়ারে যদিও বা ৮০% পর্যন্ত লাগানো যায়, মিড ক্যাপ বা স্মল ক্যাপে ৬০-৬৫%-এর উপরে যাওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। বাকি টাকা নির্ভরযোগ্য বন্ড বা সরকারি ঋণপত্রে বিনিয়োগ করা সমীচীন। শেয়ারবাজারের মাধ্যমেই তা করা যায়।
২) যেকোনো সময়ে প্রয়োজন হতে পারে এমন অর্থ বিনিয়োগ করার জন্য ‘লিক্যুইড ফান্ড’ নির্ভরযোগ্য।
৩) যাঁরা ‘প্যাসিভ’ পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করতে চান তাঁদের জন্য আছে ইনডেক্স ফান্ড অথবা শেয়ারবাজারের ‘ইনডেক্স এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড’ বা ইটিএফ।
৪) যাঁরা ‘অ্যাক্টিভ’ পদ্ধতিতে ইক্যুইটি শেয়ারে সরাসরি বিনিয়োগ করবেন, তাঁদের মাথায় রাখতেই হবে যে অনেকগুলি শেয়ার মিলিয়ে ঝুঁকির ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। আর যতদিন বিনিয়োগ থাকবে, ততদিন তা পর্যবেক্ষণ ও দরকারে পরিবর্তন করে যেতে হবে। প্রখ্যাত আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকর্তা ও বিশেষজ্ঞ ওয়ারেন বাফেট এই পদ্ধতিকেই তাঁর সাফল্যের অন্যতম সোপান বলে মনে করেন। তাঁর বাছাই ও পরিবর্তনের পদ্ধতি ‘ভ্যালু ইনভেস্টিং’ নামে পরিচিত।
৫) স্মল ক্যাপ ফান্ড বা শেয়ার বেশি রিটার্ন দেয়, কিন্তু তা উপর বা নীচে – যেকোনো দিকে হতে পারে। ফান্ডের ক্ষেত্রে ঝুঁকির ব্যালান্সিং বা ভারসাম্য ফান্ড ম্যানেজারের ব্যক্তিগত দক্ষতার ওপর নির্ভরশীল।
৬) ৮০সি তে কর ছাড়ের সুযোগ হাতে থাকলে ‘ইএলএসএস’-এ তিন বছরের জন্য বিনিয়োগ লাভজনক।
৭) দীর্ঘমেয়াদে বেশি রিটার্ন পেতে ও লাভের ওপর কম আয়করের সুবিধা নিতে লার্জ ক্যাপ ইক্যুইটি শেয়ার অথবা ফান্ড-এর বিকল্প নেই।
শেয়ার বনাম মিউচুয়াল ফান্ড
১) মিউচুয়াল ফান্ড-এ ফান্ড ম্যানেজমেন্ট এর খরচ বেশি। শেয়ারে তুলনায় অনেক কম।
২) শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সম্পূর্ণ নিজের হাতের মধ্যে। মিউচুয়াল ফান্ড-এর ক্ষেত্রে তা সম্পূর্ণ ফান্ড ম্যানেজারের হাতে। নিজস্ব ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট সবসময়ে বিনিয়োগ করা শেয়ারের তালিকা দেখায়, কিন্তু ছমাস পর মিউচুয়াল ফান্ড কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে ওই ফান্ডের বিনিয়োগ তালিকা প্রকাশিত হয়। অতএব মনে রাখতে হবে, একটি ফান্ডের যে বিনিয়োগ তালিকা এখন উপলব্ধ, তা ছমাসের পুরনো হতে পারে।
৩) শেয়ারের বাজারদামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মিউচুয়াল ফান্ডের ‘নেট অ্যাসেট ভ্যালু’ বা এনএভি ওঠানামা করে।
৪) ইনিশিয়াল পাবলিক অফার বা আইপিও-র মাধ্যমে নতুন শেয়ারে আবেদন করা যায়, এক্ষেত্রে ফেস ভ্যালুর উপর প্রিমিয়াম চার্জ করা হতে পারে। ‘নিউ ফান্ড অফার’ বা এনএফও-র মাধ্যমে শুধুমাত্র ফেস ভ্যালুতেই মিউচুয়াল ফান্ড ইস্যু হয়।
৫) শেয়ার ভগ্নাংশে ইস্যু হয় না, কিন্তু মিউচুয়াল ফান্ড তা হতে পারে। শেয়ারের দাম বড়জোর পয়সা অর্থাৎ দুই দশমিক স্থান পর্যন্ত যায়, কিন্তু মিউচুয়াল ফান্ডের দাম ৪ দশমিক স্থান পর্যন্ত যেতে পারে। শেয়ারের ‘টিক সাইজ’ ৫ পয়সা। অর্থাৎ কোনও শেয়ারের দাম ১০.২৩ টাকা হতে পারে না, কিন্তু মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে এমন কোনও ‘টিক সাইজ’ নেই।
সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (এসআইপি)
পোস্টঅফিসের স্বল্পসঞ্চয় প্রকল্পের সার্থক বিকল্প হয়ে উঠেছে সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান বা এসআইপি। সবারই খুব পছন্দের এবং সুবিধার পদ্ধতি। ব্যাঙ্ক থেকে নিয়মিত টাকা কাটিয়ে এসআইপি করা যায়। মনে রাখারও ঝামেলা নেই। মাসে মাসে এসআইপি সবচেয়ে জনপ্রিয়, কিন্তু সপ্তাহে, কোয়ার্টারে, দিনে বা ছমাসের সময়ান্তরেও এসআইপি করা সম্ভব। বছরের শেষে একেবারে বেশি টাকা লাগানোর থেকে প্রত্যেক মাসে অল্প করে ভাগ করে বিনিয়োগ করা বেশি রিটার্নযোগ্য।
যেকোনো ওপেন এন্ডেড বা বাজারে বিনিয়োগের জন্য খোলা আছে এমন ফান্ডেই এসআইপি করা সম্ভব।
এসআইপি-র উল্টোদিকে থাকা নিয়মিত টাকা তুলে নেওয়ার পদ্ধতির নাম ‘সিস্টেম্যাটিক উইথড্রয়াল প্ল্যান’ বা ‘এসডবলুপি’। একটি ফান্ড বিক্রি করে নিয়মিত অন্য ফান্ড-এ এসআইপি পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করার নাম হচ্ছে ‘সিস্টেম্যাটিক ট্রান্সফার প্ল্যান’ বা ‘এসটিপি’।
শেয়ারেও কি এসআইপি সম্ভব নয়? গত শতকে কোনও কোনও বাবাকে কিন্তু সন্তানের বা পরিবারের ভবিষ্যতের কথা ভেবে এসআইপি পদ্ধতিতে একটু একটু করে লার্জ ক্যাপ শেয়ার কিনে প্রভূত লাভ করতে দেখা গেছে। পরিভাষায় এর নাম ‘ভ্যালু অ্যাভারেজিং ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান’ বা ভিআইপি।এটি প্যাসিভ ইনভেস্টমেন্ট পদ্ধতির মধ্যে পড়ে। অর্থাৎ একবার ঠিক হয়ে গেলে আর মাথা খাটানোর প্রয়োজন পড়ে না।
কে শেয়ার কিনবেন আর কেই বা মিউচুয়াল ফান্ড? যদি নিজের পছন্দ-অপছন্দ সম্বন্ধে খুব খুঁতখুঁতে হন, যদি বাজার চলতি পোশাক নয়, বুটিক আপনার গন্তব্য হয়, তবে আপনার জন্য শেয়ার। আর যদি এর উল্টোটা হয়, যদি পাশের মানুষ যা করছেন তা দেখে সবসময়ে মাথায় ঘুরতে থাকে, এটাই করা উচিত, তবে নির্দ্বিধায় মিউচুয়াল ফান্ড-এর দিকে হাত বাড়ান। নিজের সিদ্ধান্তের ভার নিজের হাতে না রেখে ছেড়ে দিন ভাল রেটিং ওয়ালা ফান্ড-এর ফান্ড ম্যানেজারের হাতে।
আরও জানতে ফোন করুন এই নম্বরে +91 9051052222 বা ইমেল করুন [email protected] এ।
– অদিতি নন্দী