মূল্যবৃদ্ধির আতসকাচের তলায় ব্যাঙ্ক-পোস্টঅফিসের মেয়াদি আমানতের রঙ কেমন ফিকে হয়ে যায় সেটা আমরা আগের পর্বে দেখেছি (এখানে পড়ুন, নিশ্চিত আয় প্রকল্পে মূল্যবৃদ্ধির ঘুণ পোকা, ব্যাঙ্ক-পোস্টঅফিসের বাইরে ভাবুন)। কিন্তু, তার মানে এই নয় যে ব্যাঙ্ক-পোস্টঅফিসে আমানত করবেন না। তবে, সারা জীবনের সঞ্চয় করা অর্থের পুরোটা ব্যাঙ্ক-পোস্টঅফিসে রাখাটাও সমীচীন নয়। কেননা, শেয়ার-মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নির ঝুঁকি এড়াতে গিয়ে সেক্ষেত্রে খেসারত দিতে হয় রিটার্নে। তাছাড়া, ব্যাঙ্ক আমানতে টাকা রাখারও যে ঝুঁকি আছে সেটাও মাথায় রাখতে হবে। কোনও ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হলে বা উঠে গেলে, ওই ব্যাঙ্কে আপনার একাধিক প্রকল্পে কোটি টাকা আমানত করা থাকলেও ব্যাঙ্ক আমানত বিমার আওতায় আপনি সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকা ফেরত পেতে পারেন।
এ বার দেখে নেওয়া যাক, শেয়ারে লগ্নির ঝুঁকি কতটা।
১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি দেশের প্রথম শেয়ার সূচক সেনসেক্স প্রবর্তন করার সময় ১৯৭৮-৭৯ সালে ৩০টি সংস্থার শেয়ার দরের আনুপাতিক গড়কে ১০০ ধরে ওই সূচক তৈরি করা হয়। ১৯৭৯ সালের ৩১ মার্চ থেকে সেনসেক্সের রিটার্নের প্রতি বছর, প্রতি ৩ বছর, প্রতি ৫ বছর, প্রতি ৭ বছর, প্রতি ১০ বছর চলমান গড় (তিন বছরের চলমান গড় হিসাব করার সময় যেমন ২০০০ সাল থেকে ২০০২ সাল, ২০০১ সাল থেকে ২০০৩ সাল, ২০০২ সাল থেকে ২০০৪ সাল, ইত্যাদি) হিসাব করলে দেখা যায় (টেবিল দেখুন), যত দীর্ঘ মেয়াদে শেয়ার বাজারে লগ্নি করা যায়, লোকসানের সম্ভাবনা ততই কমতে থাকে।
১বছর | ৩বছর | ৫বছর | ৭বছর | ১০ বছর | ১৫বছর | ২০বছর | ২৫বছর | |
ক্ষতির সম্ভাবনা | ৩১.৭১% | ১৭.৯৫% | ৫% | ৮.৫৭% | ৩.১৩% | ০% | ০% | ০% |
সর্বোচ্চ গড় বার্ষিক ক্ষতি | ৪৭% | ১৫% | ৫% | ২% | ২% | – | – | – |
সর্বোচ্চ গড় বার্ষিক রিটার্ন | ২৬৭% | ৬২% | ৫৩% | ৪৩% | ৩৫% | ২৭% | ২০% | ১৯% |
টেবিলটি ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখবেন, সাত বছর বা তার বেশি মেয়াদে লগ্নি করলে ক্ষতির সম্ভাবনা প্রায় থাকেই না। বরং, মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবকে কাটিয়ে ওঠার জন্য এর চেয়ে বেশি গড় বার্ষিক রিটার্ন অন্য কোথাও পাওয়া যায় না।
তাছাড়া, ইকুইটি বা শেয়ারে লগ্নি করলে ব্যাঙ্ক সুদের থেকে বেশি কর সুবিধা পাওয়া যায়। শেয়ারে লগ্নি করার ১২ মাসের মধ্যে সেই লগ্নি বিক্রি করলে লাভের ১৫% এবং ১২ মাস পর লগ্নি বিক্রি করলে লাভের ১০% ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্স হিসাবে দিতে হয়। তুলনায়, ব্যাঙ্ক আমানতে সুদের ওপর আপনাকে আপনার প্রান্তিক আয়করের হারেই ট্যাক্স দিতে হয়।
ওপরের টেবিল থেকে আর একটা ধারণা পাওয়া যায়। সেটা এই যে, আপনার যদি পাঁচ-সাত বছরের মধ্যে অর্থের প্রয়োজন হয় তবে, সেই টাকা আপনি ব্যাঙ্কে রাখুন। যে অর্থ পাঁচ-সাত বছর পরে প্রয়োজন হবে তা শেয়ারে লগ্নি করুন।
আরও জানতে ফোন করুন এই নম্বরে +91 9051052222 বা ইমেল করুন [email protected]
– পরিচয় গুপ্ত