ডাবর – বাংলার গৌরবময় বাণিজ্যের ইতিহাস

ডাবর – বাংলার গৌরবময় বাণিজ্যের ইতিহাস

ডাবর… আমাদের নিজস্ব কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত, যেমনটা তখন বলা হত।

ডাক্তার এস.কে. বর্মন সাধারণ নিম্নবিত্ত মানুষের দুরারোগ্য চিকিৎসায় বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক ওষুধ ব্যবহার করা শুরু করেন একমাত্র নিম্নবিত্ত মানুষের অর্থনৈতিক অসঙ্গতার কথা মাথায় রেখে। মনে রাখতে হবে সেই সময় কলেরা, ম্যালেরিয়া, প্লেগে আক্রান্ত বহু মানুষ। 

খুব তাড়াতাড়ি বিশ্বস্ত ‘ডাক্তারের’ ওষুধের কথা এবং রুগীর আরোগ্যের কথা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে।  ‘দেবাংগিরি’ এই চিকিৎসা পদ্ধতি ডাবরের কর্ম যজ্ঞ ও নামের উৎসস্থল।

‘ডাবর’ – ডাক্তার বর্মনের অক্লান্তপ্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮৪তে। তাঁর তৈরি ওষুধের বড় মাপের উৎপাদন শুরু হয়১৮৯৬তে। ১৯০০ সালে শুরু হয় প্রাকৃতিক ভেষজ ওষুধ তৈরি। ১৯১৯এ প্রতিষ্ঠা হয় ‘ডাবর’এর নিজস্ব গবেষণাগার। ১৯২০ সালে ‘নরেন্দ্রপুর’ এবং ‘ডাবু গ্রাম’ এ তৈরী ডাবরের ওষুধ বিহার এবং উত্তরপশ্চিম এ পৌঁছতে শুরু করে। 

১৯৭২ সালে ‘ডাবরের’ কর্মযজ্ঞ শুরু হয় দিল্লি থেকে একটু দূরে ফরিদাবাদে, যদিও সাময়িক সময়ের জন্য। ১৯৭৯ সালে ‘ডাবর’ শুরু করে তার অত্যন্ত উপযুক্ত আয়ুর্বেদিক ওষুধ এবং নিত্য প্রয়োজনীয় কিছু আয়ুর্বেদীয় খাদ্য এবং শরীর চর্চার নানা উপাচার। তারা শুরু করে তাদের নিজস্ব গবেষণা কেন্দ্র ‘ডি আর ডি সি’। 

আজ থেকে ২৭ বছর আগে ১৯৯২ সালে ডাবর স্পেন এর ‘এগ্রোলিমেন’ সংস্থার সঙ্গে যৌথ ভাবে ভারতবর্ষে কনফেক্শনারি জগতে পা রাখে। ১৯৯৩ সালে ডাবর বিশেষ ভাবে ক্যান্সার চিকিৎসার অঙ্গ হয়ে ওঠে। তাদের অনকোলজি ফর্মুলেশন কারখানা তৈরী হয় ‘বাড্ডি’ হিমাচল প্রদেশে। 

ডাবর শুরু করে ইসরাইলের ‘ওসেম’ এর সঙ্গে খাদ্য এবং ফ্রান্স এর ‘বন গ্রেইন’ এর সঙ্গে চিজ এবং অন্যান্য দুগ্ধজাত ব্যবসা। 

১৯৯৭ সালে ‘ডাবর’ পুরোপুরি খাদ্য ব্যবসার জন্য অন্য একটি শাখা খোলেন। ২০০৫ সালে ‘বালসারা হাইজিন’ এবং বাড়ির প্রয়োজনীয় জিনিস ওরাল কেয়ার এবং নিত্য প্রয়োজনীয় নানা সামগ্রী নিয়ে ডাবর এর নতুন উত্থান শুরু হয়। 

মুকুটে নতুন পালক যোগ হয় ২০০৮ সালে – ‘ফেম কেয়ার ফার্মা’ মহিলাদের ত্বক চর্চার নিত্য রুটিনে আর এক নাম। ২০১১ সালে ‘অজন্তা ফার্মাস ৩০প্লাস’ অভাবনীয় সাড়ার গল্প বলে। 

‘অক্সি লাইফ প্রফেশনাল কিট্’ ২০১১ সালে তৈরী হয় শুধু মাত্র বিউটি সালোঁ তে বিশেষ ভাবে মুখ এবং শরীরের বিভিন্ন অংশ ব্লিচ করার কারণে যা ফেম ব্লিচ এর আর একটি অংশ। 

২০৫ টি ভেষজ / আয়ুর্বেদিক দ্রব্য ডাবর তৈরী করে চলেছে যেমন ‘ভাটিকা’ মাথার তেল, ‘হাজমোলা’ হজমের জন্য, ‘রিয়েল ফলের রস’, ফেম ব্লিচ প্রভৃতি। 

এই আয়ুর্বেদিক সংস্থাটি তাদের কর্ম পদ্ধতি, কর্ম পরিসীমা ৬.৭ মিলিয়ন নিজস্ব শাখায় শহুরে এবং গ্রাম্য দু ধরনের বাজারেই সেরা। 

আজকের তারিখে মাথার তেল, দাঁতের মাজন, ত্বক পরিচর্যা, স্বাস্থ রক্ষা সব কিছুতেই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ‘ডাবর আমলা’, ‘ডাবর চ্যবনপ্রাশ’, ‘ডাবর মধু’, ‘হনি টাস’, ‘পুদিন হারা’…. শিশুদের ত্বক পরিচর্যায় ‘ডাবর লাল তেল’ সবার মুখেমুখে। 

পৃথিবীর ১০০টি দেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় ডাবর, যেমন মধ্য প্রাচ্য, আফ্রিকা, ইউ এস, ইউরোপ, রাশিয়া এবং সার্ক অন্তর্ভুক্ত দেশ। বৈদেশিক ব্যবসাতেই ডাবর এর বাৎসরিক আয়ের ২৭% লাভ।

শুধু স্বপ্ন নিয়ে দেশীয় ভেষজ আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার যে পথে ডাক্তার এস.কে.বর্মন পথ চলা শুরু করেছিলেন সেই স্বপ্নের পতাকা ‘ডাবর’ অপ্রতিহত রেখেছে এবং বলা যায় আগামীদিনেও দেশীয় ভেষজে এই উত্তরণ আরো আরো সুদূর প্রসারী হবে।

আরও জানতে ফোন করুন এই নম্বরে +91 9051052222 বা ইমেল করুন [email protected]

মেলভিন পিনটো (অনুলিখন : অনিন্দিতা চক্রবর্তী)

Share With

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *