কর দেবেন না কর বাঁচাবেন?

কর দেবেন না কর বাঁচাবেন?

কর বাঁচাতে বিনিয়োগ করবেন না কর মিটিয়ে দেবেন? আপনার ধন্দ যদি এই নিয়ে হয় তবে, আপনি একা নন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাণপুরুষ বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিনও ১৭৮৯ সালে এই ধন্দে পড়েছিলেন। সেই সময় জ্যঁ-ব্যাপটিস্ট লেরয়কে এক চিঠিতে ফ্র্যাঙ্কলিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সংবিধান প্রসঙ্গে লেখেনঃ ‘…মৃত্যু আর কর ছাড়া অন্য কোনও কিছুই নিশ্চিত নয়।’ 

আয়কর এড়ানোর নয়। তবে প্রশ্ন হলঃ কর দেওয়া উচিত না কর বাঁচানোর বিনিয়োগ করা উচিত? 

আয়কর আইন অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তি বছরে নির্দিষ্ট সীমার অতিরিক্ত আয় করলে সরকারকে সেই আয়ের উপর কর দিতে হবে। এই ন্যূনতম আয়ের সীমাকেই বলে বেসিক এগজেম্পশন লিমিট। তবে, আয়কর আইন মেনে নির্দিষ্ট কিছু বিনিয়োগ ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে আপনি কর ছাড় দাবি করতে পারেন। 

অর্থাৎ, আপনি যদি সরকারকে কম কর দিতে চান তবে ওই নির্দিষ্ট ক্ষেত্রগুলিতে আপনাকে বিনিয়োগ ও ব্যয় করতে হবে। 

কিন্তু, সেটা আপনার পক্ষে কতটা সুবিধার? কেননা, করের দায় কমাতে হলে আপনাকে আয়ের থেকে ওই বিনিয়োগ করতে হবে। অর্থাৎ, সংসার চালানো বা অন্য খরচের জন্য আপনার হাতে কম আয় থাকবে। কর সাশ্রয় করতে হলে আপনাকে কম আয়ে সন্তুষ্ট হতে হবে। রাজি তো? 

বিষয়টা একটু ভালো করে বোঝা যাক।   

তবে, তার আগে একটা বিষয় মাথায় রাখা দরকার, ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে কেন্দ্রীয় সরকার পুরোনো কর কাঠামোর পাশাপাশি যে বিকল্প নতুন কর কাঠামো চালু করেছে সেখানে বছরে ১৫ লক্ষ টাকা অবধি আয়ের ক্ষেত্রে করের হার কমিয়ে ৭০টি জনপ্রিয় কর ছাড়ের সুবিধা তুলে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, ট্যাক্স সেভিং বিনিয়োগের মাধ্যমে কর ছাড়ের সুবিধা নিতে হলে আপনাকে পুরোনো কর কাঠামোয় রিটার্ন দাখিল করতে হবে। 

পুরোনো কর কাঠামোয় আয়ের বিভিন্ন সীমা ও করের হার টেবিলে দেওয়া হলঃ 

১) ভারতে বসবাসকারী নাগরিক ব্যক্তি যার বয়স ৬০ বছরের কমঃ

বার্ষিক করযোগ্য আয়আয়করের হার
২.৫ লক্ষ টাকা বা তার কমকোনও কর লাগবে না
২.৫ লক্ষ টাকা থেকে ৫ লক্ষ টাকা৫%
৫ লক্ষ টাকা থেকে ১০ লক্ষ টাকা২০%
১০ লক্ষ টাকা বা তার বেশি৩০%

২) ভারতে বসবাসকারী নাগরিক ব্যক্তি যাদের বয়স ৬০ বছর ও ৮০ বছরের মধ্যে:

বার্ষিক করযোগ্য আয়আয়করের হার
৩ লক্ষ টাকা বা তার কমকোনও কর লাগবে না
২.৫ লক্ষ টাকা থেকে ৫ লক্ষ টাকা৫%
৫ লক্ষ টাকা থেকে ১০ লক্ষ টাকা২০%
১০ লক্ষ টাকা বা তার বেশি৩০%

৩) ভারতে বসবাসকারী নাগরিক ব্যক্তি যাদের বয়স ৮০ বছরের বেশি:

বার্ষিক করযোগ্য আয়আয়করের হার
৫ লক্ষ টাকা বা তার কমকর লাগবে না
৫ লক্ষ টাকা থেকে ১০ লক্ষ টাকা২০%
১০ লক্ষ টাকা বা তার বেশি৩০%

এখানে মনে রাখতে হবে, করদাতার ‘মোট আয়’ বা ‘বার্ষিক করযোগ্য আয়’ যদি ৫ লক্ষ টাকা বা তার কম হয় তবে, আয়কর আইনের ৮৭এ ধারায় ওই করদাতা তাঁর করের পুরোটাই (সর্বাধিক ১২,৫০০ টাকা) ‘রিবেট’ দাবি করতে পারেন। এবং সেটা পুরোনো, নতুন দুই কর কাঠামোতেই। ফলে, যাদের আয় বছরে ৫ লক্ষ টাকা তাঁদের কোনও ট্যাক্স-সেভিংস বিনিয়োগ করার প্রয়োজন নেই।   

আপনি যদি চাকুরিজীবী হন তবে ‘স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন’ এবং ইপিএফ অনুদানে কর ছাড়ের সুবিধা নিয়ে ওই আয়ের সীমা আরও বাড়িয়ে নিতে পারেন। কী ভাবে? নীচে ব্যাখ্যা করা হলঃ   

৮৭এ ধারায় ট্যাক্স রিবেট যে ভাবে হিসাব করবেন:

আয়ের উৎসআয়ের পরিমাণ (টাকা)
বেতন৬,০০,০০০
বাদ যাবে: স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন৫০,০০০৫,৫০,০০০
ব্যাঙ্ক আমানতে সুদ১৫,০০০
গ্রস আয়৫,৬৫,০০০
বাদ: ইপিএফ অনুদানের জন্য ৮০সি ধারায় ছাড়৪০,০০০
স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়ামে ৮০ডি ধারায় ছাড়২৫,০০০৬৫,০০০
মোট করযোগ্য আয়৫,০০,০০০
মোট করের দায়*১২,৫০০
বাদঃ ৮৭এ ধারায় ট্যাক্স রিবেট১২,৫০০

*৪% সেস হিসাবে ধরা হয়নি

এখান থেকে স্পষ্ট, বছরের ৬ লক্ষ টাকা বেতন পেলে স্বাস্থ্যবিমা ছাড়া আলাদা করে অন্য কোনও ট্যাক্স-সেভিংস বিনিয়োগ করার দরকার নেই। 

বছরে ৬ লক্ষ টাকার বেশি আয় হলেও আপনার উচিত কর দেওয়া অথবা কর সাশ্রয়ের সুবিধা-অসুবিধার কথা খতিয়ে বিবেচনা করা। কেননা, কর সাশ্রয়ের জন্য যে বিনিয়োগ ক্ষেত্রগুলি আয়কর আইনে নির্দিষ্ট করা আছে সেগুলিতে ৩ থেকে ৫ বছরের আগে লগ্নি তোলা যায় না। অর্থাৎ, একবার ট্যাক্স সেভিংস ইনভেস্টমেন্ট করলে অন্তত ৩ বছর ওই বিনিয়োগে আপনি হাত দিতে পারবেন না। 

ধরা যাক, একজন চাকুরিজীবী করদাতার বছরে বেতন ১২ লক্ষ টাকা। স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন, ইপিএফ অনুদান এবং স্বাস্থ্যবিমা ছাড়া তাঁর যদি একটি হাউজিং লোন থাকে তবে তাঁর করের পরিমাণ এইভাবে হিসাব করা হবেঃ 

আয়ের উৎসপরিমাণ (টাকা)
বেতন১২,০০,০০০
বাদ: স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন ৫০,০০০
গ্রস আয় ১১,৫০,০০০
বাদ: ইপিএফ অনুদানের জন ৮০সি ধারায় ছাড় ৫০,০০০
হোমলোনের আসল পরিশোধে ৮০সি ধারায় ছাড় ১,০০,০০০
হোমলোনের সুদ পরিশোধে ২৪ ধারায় ছাড় ২,০০,০০০
স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়ামে ৮০ডি ধারায় ছাড় ২৫,০০০
মোট করযোগ্য আয়৭,৭৫,০০০
কর দিতে হবে* ৬৭,৫০০

*৪% সেসের হিসাব ধরা হয়নি

এখানে করদাতাকে ৬৭,৫০০ টাকা আয়কর দিতে হবে, কিন্তু তাঁর হাতে খরচ করার মতো আয় থাকবে ৮, ২৫,০০০ টাকা! আয়কর আইনের ৮০সিসিডি(বি) ধারায় ছাড়ের সুবিধা নিয়ে করদাতা এনপিএসে ৫০,০০০ টাকা বিনিয়োগ করে তাঁর করের পরিমাণ আরও ১০,০০০ টাকা কমাতে পারেন। কিন্তু ওই ১০,০০০ টাকা কর কমাতে হলে, প্রতি বছর তাঁকে এনপিএসে ৫০,০০০ টাকা বিনিয়োগ করে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে, তাঁকে আরও ৫০,০০০ টাকা আয় হাতছাড়া করতে হবে।

ফলে, কর সাশ্রয়ের জন্য বিনিয়োগ করার আগে দু’বার ভাবুন — কর দেবেন না কর বাঁচাবেন!

আরও জানতে ফোন করুন এই নম্বরে +91 9051052222 বা ইমেল করুন [email protected]
পরিচয় গুপ্ত

Share With

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *