এসে গেল আরও একটা নতুন বছর। গত একবছরে কতটা এগোতে পারলেন? গুছিয়ে নেওয়ার কাজটা সেই কবে থেকে করবেন ভাবছেন! কিন্তু হয়ে উঠল কি? চিন্তা নেই! নতুন একটা লাইন টেনে জীবনটা আজ থেকেই বেশ গুছিয়ে শুরু করুন।
নতুন খাতা, হালখাতার প্রয়োজন নেই। হাতের মুঠোয় মোবাইলই আপনার জীবনকে গুছিয়ে নিতে সাহায্য করবে।
ব্যাঙ্কের অ্যাপ থেকে গত এপ্রিল থেকে মার্চ – কত খরচ হল দেখে নিন। সহজেই পেয়ে যাবেন। যদি ইচ্ছা হয়, তলিয়ে দেখুন, মাসের সাধারণ খরচ কত হল, ছেলেমেয়ের জন্য নিয়মিত খরচ কত, বছরে বিশেষ বিশেষ সময়ে কত খরচ করেছেন।
আলাদা করে শুধু দেখে নিন, নিয়মিত বিনিয়োগের খাতায় কত গেছে। যেমন, মাসিক এসআইপি, বার্ষিক পিপিএফ ইত্যাদি।
আয়ের অঙ্ক তো জানাই আছে। আয় কত বাড়তে পারে, তাও জানেন। তাহলে আয়ব্যয়ের হিসেব অর্থাৎ বাজেট এবার আপনার হাতের মুঠোয়। অতিরিক্ত কত তাও জেনে ফেললেন।
বছরে বাঁচবে কত তা জেনে ফেলার সুবিধা হচ্ছে, আগে থেকে পরিকল্পনা করতে পারেন কীসের জন্য এই টাকা কাজে লাগাবেন। তাহলে যেখানে সেখানে অপরিকল্পিত অপব্যবহারের সম্ভাবনা কমবে।
এই নতুন বছরে সবচেয়ে আগে যা করতে হবে, তা হল পুরনো সঞ্চয় বা বিনিয়োগকে আপনার নিজস্ব পরিকল্পনায় জুড়ে নেওয়া। কী কী আছে, তার একটা তালিকা করুন, তাতে শুধু ফিনান্সিয়াল অ্যাসেট বা আর্থিক সম্পদই যেন থাকে। অর্থাৎ বসত বাড়ি, গহনা ইত্যাদি নয়। কিন্তু প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি, এনপিএস যেন এই তালিকায় থাকে। সম্পদের পাশে পাশে চিহ্নিত করতে হবে কীসের উদ্দেশ্যে জমাচ্ছেন এই সম্পদ। অর্থাৎ, অবসরজীবনের জন্য, অথবা ছেলেমেয়ের পড়াশোনা বা বিয়ে, ভবিষ্যতে ফ্ল্যাট কেনা কিংবা বার্ষিক বেড়াতে যাওয়া। এই কাজটা করে ফেলা মানেই হয়ে গেল ‘গোল সেট’।
একটা বেশ বড় কাজ করে ফেললেন। এবার টাকার অঙ্কে ঢুকে পড়ুন। এইচএলভি ক্যালকুলেটর, আরসি ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে বার করুন, আপনার কোথায় কত অঙ্কের প্রয়োজন।
তারপর দেখুন, সম্পদের চিহ্নিত তালিকায় আছে কত আর তা প্রয়োজনের তুলনায় কতটা কম বা বেশি। যদি বেশি থাকে, সেই অতিরিক্ত অংশ আপনি অন্য কোনও লক্ষ্যের সঙ্গে জুড়তে পারেন। আর কম থাকলে কীভাবে সেই ঘাটতি পূরণ করবেন, পরিকল্পনা করে সেই দিকে এগোন।
চিন্তা নেই। একদিনে সব হয় না, এক বছরেও নয়। বরং একটু একটু করে পরিকল্পনা করে এগোনো ভাল। আর রিটার্ন কত আশা করবেন, তা জানতে যাচাই করতে হবে নিজের রিস্ক প্রোফাইল বা ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা।
এসআইপি পদ্ধতিতে এগোতে পারেন। সেজন্য, প্রথমে দেখে নিন, কত দিয়ে শুরু করবেন। এখন কম দিয়ে শুরু করে পরে একটু একটু করে বাড়াতেও পারেন। দেখে নিন, কত টাকা কতদিন পরে পেতে গেলে কত দিয়ে শুরু করা প্রয়োজন। নিজের আয় যেমন বাড়বে, সেই হারে বিনিয়োগও বাড়াতে পারবেন সহজেই।
এবার বড় প্রশ্ন, কোথায় কীভাবে বিনিয়োগ করলে সময়ে লক্ষ্যভেদ সম্ভব হবে, আবার নিজের যতটা সহনক্ষমতা, ঝুঁকি তার মধ্যেই থাকবে। তাহলে? সোনার পাথরবাটির প্রয়োজন নেই। সঠিক বিনিয়োগ পরিকল্পনাতেই এমন সম্ভব।
মনে রাখবেন, আপনার রিস্ক স্কোর যে অ্যাসেট অ্যালোকেশন প্রস্তাব করেছে, তার মধ্যে থাকলেই আখেরে লাভ। যে সম্পদ তালিকা তৈরি করেছেন, তা কোন খাতে কত শতাংশ গেছে, অবশ্যই লক্ষ্য করুন।
যদি না মেলে, তবে সম্পদের বন্টন একটু সাজিয়ে গুছিয়ে নিতে হবে। বড় কাজ তো করেই ফেলেছেন। এবার বাকিটা সহজে হয়ে যাবে। একটু সময় দিন, প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিন।
বছরটা ভাল কাটুক। এখন থেকে বাকি জীবন সহজে কাটুক, শান্তিতে কাটুক। বিনিয়োগ থাকুক অ্যাপে অথবা কাগজেকলমে। ভাল থাকুন সকলে, সপরিবারে।
আরও জানতে ফোন করুন এই নম্বরে +91 9051052222 বা ইমেল করুন [email protected] এ।
– অদিতি নন্দী